জীবন বাজি রেখে করোনা যুদ্ধে রাজশাহীর চিকিৎসক দম্পতি

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মেয়েকে ভাইয়ের বাসায় ও শাশুড়ীকে তার অন্য মেয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন, এরপর স্বামী-স্ত্রী করোনা জয়ের যুদ্ধে নেমেছেন। জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন করোনা ল্যাবে। এমনই এক চিকিৎসক দম্পতি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও ভাইরোলজি বিভাগের এই চিকিৎসক অধ্যাপক বুলবুল হাসান এবং একই বিভাগের প্রধান তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক সাবেরা গুলনেহার।
বুলবুল হাসান করোনা ল্যাবের দায়িত্বে রয়েছেন। আর স্ত্রী সাবেরা গুলনেহার ঐ ল্যাবের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত এই দম্পতির হাত ধরেই পরিচালিত হচ্ছে রাজশাহী করোনা ল্যাব। গত ১ এপ্রিল ওই ল্যাব চালু হওয়ার পর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
করোনা পরীক্ষায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর তৃতীয় ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয় রাজশাহীতে। ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর প্রয়োজন হয় দক্ষ চিকিৎসক ও ল্যাব টেকনিশিয়ানদের। আর শুরুতেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে আসেন বুলবুল-গুলনেহার চিকিৎসক দম্পতি।
সাবেরা গুলনেহারকে প্রধান করে ল্যাব পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় একটি দল। এই দলের সদস্য এখন ১৩ জন। এর মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসক এবং আটজন টেকনোলজিস্ট। কাজ হয় দুই শিফটে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ চলে। শুক্রবারও ছুটি নেই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই ল্যাবে প্রায় তিন হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
বুলবুল হাসান নিজেই অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থাইটসহ নানা রোগে ভুগছেন। তিনি বলেন, ল্যাবে কাজ শুরুর পর একমাত্র মেয়েকে ছোট ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের মাধ্যমে সে যেন আক্রান্ত না হয়, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, দেশসেবায় ব্রত নিয়ে যখন এই কাজ করে যাচ্ছি, তখন জীবনের মায়া আর আপনজনের মায়া করে কী লাভ! দেশের মানুষের সেবা করে দেশটা ঠিক রাখতে পারলে একদিন আপনজনদেরও কাছে পাব।
সাবেরা গুলনেহার বলেন, এই কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো ঠিকমতো খাওয়াটাও হয় না। দুপুরের খাবার খেতে হয় ল্যাবেই। আবার এখন রোজার মধ্যে ইফতারও করতে হয় ল্যাবে। কখনো কখনো রাতের খাবারও খাওয়া হয় না। বাসায় গিয়ে একেবারে সেহরি রান্না করে খেতে হয়। এভাবেই চলছে। তবুও চাই দেশের মানুষের সেবা করে যেতে। দেশ করোনামুক্ত হলেই আমাদের স্বার্থকতা।
গুলনেহার আরো বলেন, করোনা ল্যাবে কাজ করার জন্য শয্যাশায়ী মাকে বোনের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া স্বজনদের বাসায় আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তার পরও স্বামী-স্ত্রী এই ভেবে ভালো আছি যে আমরা দেশের ক্রান্তিলগ্নে কাজ করতে পারছি।
আরপি/ এএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: