রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

মানহীন পিপিই ও মাস্ক- এ সয়লাব রাজশাহীর বাজার


প্রকাশিত:
৩০ এপ্রিল ২০২০ ২১:৩৫

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫৩

মানহীন পিপিই ও মাস্ক- এ সয়লাব রাজশাহীর বাজার

 

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় ক’দিন আগেও প্রসাধন সামগ্রী বিক্রি করতেন সিরাজুল ইসলাম। করোনাভাইরাস আসার পর তার সেই দোকান বন্ধ। পেটের দায়ে তিনি ব্যবসা বদল করেছেন। এখন সিরাজুল ইসলাম করোনা সুরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রেতা। সাহেববাজার কাঁচাবাজারে দিব্যি পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) বিক্রি করছেন সিরাজুল ইসলাম। কাঁচাবাজারে একটি মাছের দোকানের পাশেই এ দোকান তার।

পিপিই, মাস্ক, গাউন, হ্যান্ডগ্লাভস, স্যানিটাইজার, চিকিৎসকদের মাথায় পরার টুপি সবই পাওয়া যায় তার দোকানে। সিরাজুলের মত নগরীতে আরো অনেকেই এখন করোনা সুরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রেতা। এসবের মান দেখার কেউ নেই। একারণে বিক্রেতারা বাড়তি লাভের সুযোগ নিচ্ছেন। মানহীন পন্যও বিক্রি করছেন। আর করোনায় ভীত হয়ে সাধারণ মানুষ মানের দিক বিবেচনায় না এনে হুজুকে মেতেছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন সবশ্রেণী পেশার মানুষ। মানুষের এ ব্যবহারকে কাজে লাগিয়ে মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। রাজশাহীতে ফুটপাতে মাত্র ২৫০ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে পিপিই। মাছের দোকানের পাশেও বিক্রি হচ্ছে পিপিই। সবজি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে মাস্ক। এসব পণ্যের মান নিয়ে নেই কোন পদক্ষেপ।

নগরীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে নানা প্রতিষ্ঠানের পিপিইতে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে কিন্তু এসব পিপিইর অধিকাংশই মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামটি মোটেও সুরক্ষা দেয়ার কথা নয়। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ পিপিই কম পরলেও মাস্ক পরেই প্রতিদিনের কাজ করছেন সবাই। কিন্তু মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এন-৯৫ নামের মাস্কের কথা বলে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এফএফসি ১ এস মাস্ক। মাস্কগুলো এন-৯৫ না হলেও সেগুলোর গায়ে এন-৯৫ সিল লাগিয়ে দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

রাজশাহী সাহেব বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা বাজারে মাছের দোকানের পাশেই বিক্রি হচ্ছে পিপিই। মাছের দোকানের পানি গড়ে যাচ্ছে করোনা সুরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রেতার দোকানের দিকে। এই অবস্থায় রাজশাহী নগরের সাহেববাজার কাঁচাবাজারে দিব্যি পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) বিক্রি করছেন সিরাজুল ইসলাম। অন্য বাজার বন্ধ তাই কাঁচাবাজারেই পসরা মেলে বসেছেন-এটাই ছিল সিরাজুল ইসলামের (৪০)সরল স্বীকারোক্তি। আরও বললেন, পেট বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে এই পণ্যের মান সম্পর্কে তাদের দাবি ‘শতভাগ সার্জিক্যাল’ জিনিস। তাদের কেউ বাধাও দেননি। তারা স্বাধীনমতো ব্যবসা করছেন। এ কাঁচাবাজারেই পাশপাপাশি এই পণ্যের চারটি দোকান দেখা যায়।

এই দোকানগুলোতে করোনা সুরক্ষা সরঞ্জাম বলতে যা যা বোঝায়-তার সবই রয়েছে। এর মধ্যে কয়েক ধরনের মাস্ক, গাউন, হ্যান্ডগ্লাভস, স্যানিটাইজার, চিকিৎসকদের মাথায় পরার টুপি রয়েছে। গাউনের প্যাকেটে রয়েছে জুতার ওপর দিয়ে পরার জিনিস, একজোড়া হ্যান্ডগ্লাভস। এইগুলোর দাম ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। আলাদা করে হ্যান্ডগ্লাভস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মাথায় পরার টুপি ১০ টাকা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাতের এই দোকানিরা খুচরা ও পাইকারী দুই ধরণের ক্রেতাদের কাছেই পণ্য বিক্রি করছেন।

আব্দুল বারিক (৩৫)আগে চশমা ও বেল্ট বিক্রি করতেন। এখন সেই ব্যবসা চলছে না। দোকান খুলতেও দেয়া হচ্ছে না। তাই তিনিও সিরাজুল ইসলামের মতোই বললেন, বাধ্য হয়েই পেশা বদল করে এখন পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) এর ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এগুলো এখন রাজশাহীতেই তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে কিনে এনেছেন। জায়গা না পেয়ে কাঁচাবাজারেই বসেছেন। তার দোকানে বেশ ভিড় দেখা গেল। একজন পাইকার তার কাছ থেকে অনেকগুলো হ্যান্ডগ্লাভস ও মাস্ক কিনলেন। এই ক্রেতা নাম প্রকাশ না করে বললেন, তার আরেক জায়গায় দোকান আছে। সেখানে বিক্রি করবেন। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতেই আব্দুল একটু ভয় পেয়ে যান। শেষ পর্যন্ত বলেন, পেটের দায়ে ব্যবসা বদল করে এগুলো বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

সবজি দোকানের পাশে পিপিই এর পসরা মেলে বসেছেন ওহিদুল ইসলাম (৫৫)। সবজির দোকানি অনুপস্থিত দেখে তিনি তার জায়গাটা দখল করেছেন। দোকানে আরেকজন অল্প বয়সী ছেলে রয়েছে। ওহিদুল তাকে মালামাল গুছিয়ে সহযোগিতা করছেন। রোদে ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন। তার কথাবার্তার মধ্যে উত্তেজনা প্রকাশ পায়। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বললেন, তারা খুব ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যবসায় পূজি বিনিয়োগ করেছেন। একটি হ্যান্ড গ্লাভসের প্যাকেট দেখিয়ে তিনি বললেন, এই প্যাকেটটা প্রায় দেড়গুন দাম দিয়ে কিনেছেন। কিন্তু কালকে যদি করোনা থেমে যায়, তাহলে তার ব্যবসা মাটি। একটা মালও বিক্রি হবে না। এগুলো কোনো কাজে আসবে না। সব ফেলে দিতে হবে। পেটের তাগিদে এই ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যবসায় নেমেছেন।

কাঁচাবাজারে পিপিই বিক্রি করার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্য গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য বলেন, এ সময় সব ব্যাপারে মাথা ঘামাতে গেলে তো মাথাই নষ্ট হয়ে যাবে। তারা সরকারি পিপিই কোথাও থেকে চুরি করে এনে বিক্রি করছে না, স্থানীয়ভাবে তৈরি করে বিক্রি করছেন সেটা আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে-তারা দেখবে। তবে স্থানীয়ভাবে কেউ তৈরি করে বিক্রি করলে তো খারাপ না। মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আর মান সম্মত কি না তা মাননিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ দেখবে।

আরপি/ এআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top