রাজশাহী শনিবার, ৩রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২

মোহনপুরে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে পানের হাটে হাজারও মানুষ


প্রকাশিত:
২২ এপ্রিল ২০২০ ২১:৫৮

আপডেট:
৩ মে ২০২৫ ০৪:৩৯

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। জনসমাগম এড়াতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে মসজিদে নামায আদায়। দোকানে দোকানে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে দেওয়া হয়েছে বৃত্ত। এত কিছুর পরও থেমে নেয় জনসমাগম।

দেশে দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর মধ্য রাজশাহী জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ জন। রাজশাহী জেলাকে করোনা সংক্রমণরোধে জনগনকে বাড়ীতে অবস্থান করতে ইতিমধ্যেই জেলার সব হাট-বাজার লকডাউন করা হয়েছে।

এত কিছুর পরেও রাজশাহীর মোহনপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সামাজিক দুরত্ব ভেঙ্গে চলে মৌগাছি ,পাকুড়িয়াসহ বিভিন্ন পানের হাট। ইতোমধ্যে উপজেলায় ১ জন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এলাকাবাসী রয়েছেন চরম আতঙ্কের মধ্যে। তবুও সামাজিক দুরত্ব ভেঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সহায়তায় রাতে বসছে উপজেলার বিভিন্ন পানের হাট। এতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যে কোন সময় ভয়াবহ রূপ ধারন পারে মোহনপুর উপজেলায়।

স্থানীয়রা জানায়, প্রশাসন, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা জনসচেতনতা, মাইকিং, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে রাতদিন পরিশ্রম করছে। কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের কারনে প্রশাসনের সকল পরিশ্রম ভেস্তে যাচ্ছে।

হাট বাজার বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও ঠেকানো যাচ্ছেনা জনসমাগম। উপজেলার মৌগাছিতে পান হাট বসে প্রতি রোববার ও বুধবার। হাটে কেনাকাটা চলে সারাদিন । সেই ধারাবাহিকতায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পান হাটের নির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে হাট থেকে পশ্চিম দিকে ৫০০ গজ দুরে লতিব মাষ্টারের আম বাগানে বসানো হচ্ছে হাট।

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) রাত ৯ টা থেকে শুরু হয়ে পানের হাটটি চলে গভীর রাত পর্যন্ত। তার আগে শনিবার রাতেও হাটে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সামাজিক দুরত্ব ভেঙ্গে অল্প সময়ের হাটে বেচা কেনায় ছিল উপচে পড়া ভীড়। রাতের অন্ধকারে পান কিনতে ঢাকা,বগুড়া,গাইবান্ধা হতে ট্রাকে করে এ হাটগুলিতে আসছেন পানের পাইকাররা। স্বল্প সময়ের হাটে পান চাষীরা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে পান বিক্রিতে ব্যস্ত ছিল। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় ছিল না কারোই। অনেকের মুখে ও ছিল না মাস্ক।

দেখে যে কেউ ভাবতে পারে, এখানে করোনা ভাইরাসের কোনো বালাই নেই! গোটা বাজারে কোথাও নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। এ কারণে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান,সরকারি নির্দেশনা মেনে আমরা ঘরে অবস্থান করছি। জীবন বাঁচানোর তাগিদে যখন বাজার করতে যাচ্ছি তখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২/৪ জনকে একসাথে দেখলে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বার বার সতর্ক করছে।

ঠিক সে সময় কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বাইরের জেলা থেকে পাইকার (ব্যবসায়ী) এনে জনসমাগম করে আমাদেরকে ফেলে দিচ্ছে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিতে। আমরা গরিব মানুষ কিছু বললেই দোষ। আসলে তারা আমাদের জীবন নিয়ে চোর পুলিশ খেলা খেলছে। আমরা বাহিরে থেকে আসা লোকদের কারণে যে কোন সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারি। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহসও আমাদের নেই। আল্লাহ ছাড়া এই ক্রান্তি লগ্নে আমাদের বাঁচানোর কেউ নেই।

হাটে পান বিক্রয় করতে আসা একাধিক পানচাষী বলেন, পান না বিক্রয় করলে পরিবার নিয়ে খাব কি? আমারা মধ্যবিত্ত হওয়ায় পড়েছি বিপাকে। বাড়ীতে খাবার না থাকলেও কারো কাছে হাত বাড়াতে পারছিনা। আমাদের কথা কেউ ভাবেনা। সংসারের যোগান দিতেই শেষ সম্বল পান বিক্রয় করতে এসেছি। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পান চাষ করেছি। অল্প সময়ের মধ্য রাতের আধারে বাধ্য হয়েই আমাদেরকে চোরের মত অর্ধেক দামে হাটে পান বিক্রি করতে হচ্ছে ।

আরেক পানচাষী বলেন, হাটে আসা ও লোক সমাগমে যাওয়া নিষেধ জানি। কিন্তু কি করবো। টাকার প্রয়োজন, তাই শত বিপদ জেনেও পান বিক্রয় করতে হাটে এসেছি। পান বিক্রয় না করলে না খেয়ে মরতে হবে। এতদিন ঘরবন্দী হয়ে আছি কেউ আমাদের খোঁজ রাখেনি।

উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল পান। এ উপজেলায় কোটি কোটি টাকার পান উৎপাদন হয়। যা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখে। করোনা সংক্রমনরোধে স্থানীয় পানচাষীদের দাবি সঠিক সময়ে পান বিক্রয় না করলে নষ্ট হবে পান। ক্ষতি হবে লাখ লাখ টাকা। পানচাষীদের কথা ভেবে স্থানীয় প্রশাসন পান বিক্রয়ের জন্য হাটগুলি যদি সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সকাল ৮ থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত প্রশাসনের সহযোগিতায় চলতে দেওয়া হতো তাহলে পানচাষীরা সঠিক সময়ে পান বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতো।

এ দিকে ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার পান হাট বসানো হলেও তা জানেনা উপজেলা প্রশাসন। হাজার মানুষ গাদাগাদি করে হাট এসে পান ক্রয় ও বিক্রয় করলেও স্থানীয় প্রশাসনের কাউকে দেখা মেলেনি।

তবে খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশের জরুরি দল হাটে গিয়ে মৌগাছি হাট বসাতে ইজারাদারকে নিষেধ করে। জনসমারোধে হাটটি ভেঙ্গে দিয়ে সবাইকে বাড়ী ফিরে যেতে অনুরোধ জানিয়ে হাটটি ফাঁকা করে দিয়েছে পুলিশ।

 

আরপি/ এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top