টানা বর্ষণে দুর্গাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

কয়েকদিনের টানা বর্ষণে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলে চলতি মৌসুমে সদ্য রোপনকৃত আউশ ধান, পানবরজ ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া, কিশমত গনকৈড়, পানানগর, দেলুয়াবাড়ী, ঝালুকা, মাড়িয়া, জয়নগর ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলের আউশ ধান তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার নিন্মাঞ্চলের বিস্তর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে আউশ ধান, বিভিন্ন মৌসুমি সবজি ক্ষেত, পান বরজ তলিয়ে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দূর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের মাড়িয়া গ্রামের আকছেদ আলী, মহরম হোসেন, নজরুল ইসলাম সহ একাধিক কৃষকরা জানান, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির আউশ ধান, সবজি ক্ষেত ও পান বরজ সহ অনেক মাছ চাষের পুকুর তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে সবজির মাচানেও পানি উঠেছে। পান বরজে পানি ঢুকে ডগায় পচন ধরেছে। অবিরাম বর্ষণের কারণে অনেক এলাকার পাকা সড়কেও ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার আমগ্রামে গ্রামের সবজি চাষি শরিফ উদ্দিন বলেন, করোনাকালীন সময় চরম অভাবে সংসার চলছিল। তাই অভাব দুর করার জন্য ৮ কাঠা জমিতে পটল চাষ করেছি। বাগানও ভাল হয়েছে। কেবল দু-সপ্তাহ ৯০০ টাকা মন দরে ২ মন পটল বিক্রি করেছি। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আমার পটলের বাগান তলিয়ে গেছে।
একই গ্রামের আব্দুল আওয়াল বলেন, পানানগর ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের রমিজ ব্যাপারী বলেন, ১৬ কাঠা জমিতে ১৪ পুন লগড়ের পান বরজ গড়েছি গত দুই বছর আগে । কিন্তু পান বিক্রির পূর্বেই বন্যায় তলিয়ে পান গাছ মরে যায়। এ বছর পুনরায় পান গাছ লাগানোর পর কেবল গাছ হয়েছে এরই মধ্যে হটাৎ ভারী বর্ষণে পান বরজ তলিয়ে মরে যাচ্ছে।
উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের ধান চাষি মোকছেদ আলী বলেন, গত মুওসুমে বোরো চাষ করে ভাল ফলন ও বাজারে ভাল মূল্যে বিক্রি করতে পেরে দারুন খুশি। তাই চলতি মওসুমে ৪ বিঘা জমিতে আউস ধান রোপনের কয়েক দিনের মাথায় টানা ভাবী বর্ষণে ধান তলিয়ে গেছে। মৎস্য চাষি গোলাম সাকলায়েন বলেন, কয়েক দিন পূর্বে পানির অভাবে ভরা মুওসুমে পুকুরে মাছ চাষ বিঘ্নিত হলো। অথচ হটাৎ কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে আমার কয়েকটি পুকুরের পাড় উপচে পানির সাথে মাছ বিলে ভেসে গেছে। যা রক্ষা করার সময় হয়নি।
রাজশাহীতে গত বৃহস্পতিবার মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর থেকে অবিরাম বৃষ্টি ঝরেছে। তবে এতে স্বস্তিও ফিরেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বর্ষণ হয়েছে। এতে রাজশাহীর দুর্গাপুরে ৮৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, প্রথম দফায় বৃহস্পতিবার ভোর রাত ৩টার দিকে রাজশাহীতে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে তার পরিমাণ একটু ছিল কম।
পরে ভোর ৬টা থেকে আরম্ভ হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টি চলে একটানা দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এরপর থেমে থেমে বৃষ্টি চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এখনো আকাশে মেঘ আছে। তাই আরো বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরপি/ এসআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: