রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

মাদক মামলার সাক্ষি হওয়ায় হত্যার চেষ্টা!


প্রকাশিত:
২০ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩০

আপডেট:
২১ এপ্রিল ২০২১ ০৩:৫৯

ছবি: সংগৃহীত

মাদক মামলার সাক্ষি হওয়ায় নাইমুল হক সেন্টু নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ভুক্তভোগী নাইমুল হক সেন্টু (৫৫) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া বাসিন্দা।

গত ২ এপ্রিল নিজ বাড়ির সামনেই হত্যার চেষ্টা চালানো হয় তাকে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এলেও মাদক সিন্ডিকেটের হুমকিতে হাসপাতাল ছেড়ে যান। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরদিন পুলিশের সহায়তায় রামেক হাসপাতালে আসেন তারা। চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও প্রাণ ভয়ে বাড়িতে ফিরতে পারছেননা নাইমুল।

তার অভিযোগ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার। মেম্বরের নেতৃত্বেই গত ২ এপ্রিল তার উপর হামলা চালায় সসস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ওই সময় তার মুখে লোহার পাইপ ঢুকিয়ে মদ ঢেলে দেয়। তাকে লোহার পাইপ দিয়ে বেদম মারপিটও করে। তার চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে যাওয়ায় পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। সেই যাত্রাই তিনি প্রাণে রক্ষা পান।

বিজিবি জানিয়েছেন, গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে তাদের একটি টহলদল মাদারপুর পদ্মার চরাঞ্চল থেকে আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার। আশরাফুল ইসলামের কাছে আনুমানিক দুই কোটি টাকা মূল্যের দুই কেজি হেরোইন এবং এক হাজার ৯৭৮ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। জিজ্ঞাবাদে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক চোরাচালানের দায় স্বীকারও করেন। ওই অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাইমুল হক সেন্টু ও সাদিকুল ইসলামকে মামলায় সাক্ষি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী নাইমুল হক সেন্টুর ছেলে জুয়েল জানিয়েছে, সাক্ষি হওয়ায় মামলার শিকার হয়ে বাড়িছাড়া তারা। এলাকায় ফিরলেই তাকে এবং তার বাবাকে হত্যা করবে মাদক সিন্ডিকেটের সস্ত্রাসীরা। প্রতিনিয়তই সন্ত্রাসীরা তাদের মোবাইলে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কখনো কখনো আদালতে মিথ্যে সাক্ষ্য দিতে অর্থের প্রলোভনও দিচ্ছেন চক্রের প্রধান বাবু মেম্বর।

জুয়েল আরো বলেন, বাসায় তার প্রতিবন্ধি দুই ভাইবোন এবং বৃদ্ধা মা রয়েছেন। বাবা এবং তিনি বাড়ি ছাড়া। এই পরিস্থিতিতে তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় তারা। থানা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েও নিরাপত্তা পাচ্ছেননা। হামলার শিকার হয়েও আইনী প্রতিকার পাননি।

ভুক্তভোগী নাইমুল হক সেন্টু জানিয়েছেন, মাদকের অন্যতম ট্রানজিট গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের একজন সেতাবুর রহমান বাবু। উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য তিনি। ৫-৬ বছর আগেও তিনি ছিলেন ট্রলির লেবার। মাদকের ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের করা মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকাতেও রয়েছে তার নাম। ১৫ মার্চ বিজিবির হাতে আটক হওয়া মাদকের চালানটিও ছিলো সেতাবুর রহমান বাবুর। অভিযানে ধরা পড়া আশরাফুল ইসলাম তারই হয়ে মাদক বহন করছিলেন।

তিনি আরো বলেন, এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যেতে সেতাবুর রহমান বাবু গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তার এই সিন্ডিকেটে কয়েশ’ সন্ত্রাসীও রয়েছেন। যারা মাদক চোরাচালানসহ মাদক ছিনতাইয়েও জড়িত। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই মাদক কারবার চালিয়ে আসছেন সেতাবুর রহমান বাবু।

সাক্ষি নাইমুল হক সেন্টুর উপর হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিজিবির নায়েক সুবেদার মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিজিবির মামলায় সাক্ষি হওয়ায় সেন্টুকে হামলার স্বীকার হতে হয়েছে এটি সত্য নয়। আগের কোনো বিরোধ থাকতে পারে। তবে ২ এপ্রিল হামলার খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা সেন্টুকে উদ্ধার করে। বিজিবি সদস্যরা চলে যাবার পর তার উপর আরেক দফা হামলা হয়।

তবে মাদক মামলার সাক্ষিকে হত্যা চেষ্টায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেতাবুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি কাউকে মারার নির্দেশ দেননি। বরং গন্ডগোলের আভাস পাওয়ায় দুই পক্ষকে সর্তক করেন।

তিনি দাবি, কখনোই মাদক কারবারে তার যোগ ছিলোনা। তার নামে কোনো মামলাও নেই। তারা পারিবারিকভাবে সম্পদশালী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় তার নাম দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে।

জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ওই ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে পুলিশ অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা নেবে। সাক্ষিকে সুক্ষা দেয়ার বিয়ষটিও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

আরপি / এমবি-১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top