রমজানের আগেই উর্দ্ধমুখী বাজার, শীঘ্রই কমছে না দাম

অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও রমজানকে ঘিরে দাম বেড়েছে প্রায় সব রকমের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। শীঘ্রই কমার কোনো সম্ভাবনাও দেখছে না বিক্রেতারা। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা।
একদিকে লকডাউন অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে রিক্সাচালক-দিনমজুরসহ খেঁটে খাওয়া মানুষের জীবনে। আসন্ন রমজানে দাম নিয়ন্ত্রণে না আসলে সংসার চালানো কষ্টকর হবে বলে জানান সব শ্রেণির লোকেরা।
দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহীর বাজারগুলোতে কমছে না চাল, ডালসহ সয়াবিন তেলের দাম। নতুন করে বাড়ছে মুরগি ও সবজির দামও। অপরিবর্তিত আছে মাছ-মাংসের দাম। দাম না কমার সঠিক কারণ জানে না খোদ বিক্রেতারাই। শুক্রবার সকালে নগরীর সাহেব বাজার কাঁচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব রকমের চাল। কেজি প্রতি আটাশ ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৬৫ টাকা, স্বর্ণা ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৭৫ টাকা, কালোজিরা আতপ ৯০ টাকা, বাসুমতী ৭০ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা, চিনি গুড়া ১০০ টাকা, রনজিত ৫০ টাকা, রাধুনী ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এসময় চাল বিক্রেতা আক্কাস আলী জানান, স্বাভাবিকভাবেই রোজার মাসে চালের চাহিদা কম থাকে। সেজন্য দাম না কমলেও নতুন করে বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কয়েকদিনের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব রকমের সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৫০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, লাউ প্রতি পিচ ৩০ টাকা, কুমড়া প্রতি পিচ ২৫ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, লেবু হালি প্রতি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, ডুমুর ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অপরিবর্তিত আছে বেশ কিছু সবজির দাম। আগের মতোই পটল ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, সজিনা ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, কলা হালি প্রতি ২০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসময় সবজি কিনতে আসা রিক্সাচালক আব্দুল মজিদ বলেন, আগে যা আয় হতো লকডাউনে তার অর্ধেকও হচ্ছে না। রিক্সার জমা দিবো না সংসার চালাবো বুঝছি না। সরকার ভালোভাবে বাজার দেখভাল করলে আমরা দুটো খেয়ে বাঁচি।
আর শাকের মধ্যে প্রতি আঁটি লাল শাক ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা, ধনে পাতা ৩০ টাকা, সবুজ শাক ৩০ টাকা ও কলমি শাক ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অপরিবর্তিত আছে আদা-রসুন ও আলুর দাম। আগের মতোই প্রতি কেজি আদা ৮০ টাকা ও রসুন ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আলু বিক্রি হয়েছে জাতভেদে ১৪ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে। আর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে জাতভেদে ৩২ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়।
এছাড়া আগের মতো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিনও। প্রতি লিটার প্যাকেটজাত সয়াবিন ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা দামে। আর খোলা জাতের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। কবে নাগাদ কমতে পারে দাম বলতে পারছে না বিক্রেতারা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ইলিশ আকারভেদে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা ৮০০ টাকা, সিলভার ১০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ১১০০ টাকা, বাটা মাছ ১৬০ টাকা, মৃগেল ১৪০ টাকা, দেশি কৈ ৬০০ টাকা, পুটি ৪০০ টাকা, বোয়াল ৯০০ টাকা, আড় মাছ ৮০০ টাকা, কাতলা মাছ ২৪০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ টাকা, কালবাউস ২০০ টাকা, ফলি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
আর কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় সব রকমের মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার ১৪৫ টাকা, সোনালী ২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৪৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ১৪০ টাকা, লাল লেয়ার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এসময় মুরগি কিনতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী শাকিল ইসলাম বলেন, এমনি থেকেই চাল, তেল-সবজির দাম চড়া। আবার নতুন করে মুরগির দাম বাড়লো। করোনা লকডাউনে সবার আয় রোজগারও কমেছে। প্রশাসন বাজার মনিটরিং একটু বাড়ালে সবার জন্য উপকার হতো।
আর আগের মতোই রাজহাঁস ৪৫০ টাকা ও পাতিহাঁস ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে অপরিবর্তিত অবস্থায় গরুর মাংস ৫৫০ টাকা ও খাসির মাংস ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ডিমের মধ্যে হালিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে পোল্ট্রির সাদা ডিম ২২ টাকা, লাল ডিম ২৬ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৫০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
আরপি / এমবি-১৮
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: