রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


বগুড়ায় আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে চার পুলিশসহ আহত ২৫


প্রকাশিত:
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:০৪

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৩

ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার ধুনটে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য হবিবর রহমান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টিআই নুরুন্নবী তারিকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বগুড়া-৫ আসনে সরকার দলীয় এমপি হাবিবর রহমান, তার ছেলে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীহের সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল সনি ও তার লোকজনের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ টিআইএম নুরুন্নবী তারিখ, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই খোকন ও তার লোকজনের বিরোধ চলে আসছে। গত ৩০ জানুয়ারি ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তারিক বিদ্রোহী প্রার্থী এজিএম বাদশাহর কাছে পরাজিত হন। তার এ ভরাডুবির জন্য এমপি, তার ছেলে সহ-সভাপতি সনি ও যুগ্ম সম্পাদক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহসিন আলমকে দায়ী করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি দলের সভায় আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি টিআইএম নুরুন্নবী তারিক ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল খোকনের সঙ্গে এমপি হবিবর রহমানের বিরোধ সৃষ্টি হয়।

এছাড়া উপজেলা পরিষদে উন্নয়ন কাজে এডিবির এক কোটি ৩২ লাখ টাকা, জাইকার অর্ধকোটি এবং মসজিদ নির্মাণের ৬০ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন বরাদ্দ আসে। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই খোকন গত ডিসেম্বরের পর সভায় অংশ না নেওয়ায় বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছিল না। এতে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান- মেম্বারদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে পরাজয়, পরিষদে আসা বরাদ্দের টাকার ভাগবাটোয়ারাসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে শনিবার দুপুরে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দৌলা রিপনকে পরিষদ এলাকায় এমপির ছেলে সনির লোকজন মারধর করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের যুবলীগের সভাপতি এসএম মতিউর রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে এমপির ছেলে ও তার পক্ষের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি তারিক গ্রুপের মতিউর রহমান, সুজাউদ্দৌলা রিপন, ছাত্রলীগ সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, ছাত্রলীগ নেতা সজেদুর রহমান সাগর, রুবেল বাবু, আরিফ রহমান, নাসিম, আকাশ, বলাই মণ্ডল, হৃদয় হাসানসহ ১৬ জন এবং এমপির ছেলে সনি গ্রুপের যুবলীগ নেতাকর্মী সুজন, সাত্তার ও মিঠু আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শর্টগান দিয়ে ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ওই সময় ধুনট থানার এসআই প্রদীপ, এসআই মজিবর, কনস্টেবল সবুজ মিয়া ও কনস্টেবল মোজাফফর আহত হন।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন অভিযোগ করেন, এমপির ছেলে সনি পুলিশ নিয়ে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করেছেন।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি তারিক পরাজিত এবং উপজেলা পরিষদে আসা বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে শনিবার দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ সময় চার পুলিশ ও ১৩ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হামলায় পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক মামলা হবে।

ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টিএমআই নুরুন্নবী তারিক, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই খোকন ও সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল সনি ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান গত ডিসেম্বরের পর কোনও সভায় অংশগ্রহণ করেননি। ফলে পরিষদের আসা বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। এ সমস্যার সমাধানে শনিবার সব পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। সেখানে এমপির প্রতিনিধি হিসেবে তার ছেলে আসিফ ইকবাল সনি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যরা এলেও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই খোকন অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে বরাদ্দের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর যা ঘটেছে তা সকলে জানেন।

আরপি/ এসআই-১৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top