সাংসদ সিরাজের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ
বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং তার বাবা মৃত গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুটি ঘটনায় পাকসেনাদের সঙ্গে নিয়ে ব্রাশফায়ারে জেলার শেরপুর উপজেলার কমপক্ষে ৩৫০ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলার বাগড়া গ্রামের মৃত এলাহী বকসের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৬৫) সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি আসামিকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে এফিডেভিট করেছেন বলে জানা গেছে।
বাদী সাবেক জেলা জাসদ নেতা সাইফুল ইসলাম অবিলম্বে তদন্ত শুরু এবং বয়োবৃদ্ধ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জানান, আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় তার ক্ষতি করতে পারেন। তারপরও তিনি যা প্রত্যক্ষ করেছেন, ন্যায়বিচারের আশায় তা প্রকাশ করেছেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে; পাশাপাশি প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তবে সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ দৃঢতার সঙ্গে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাদী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বেলা ১০টায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া গ্রাম, বর্তমানে বাগড়া কলোনির মৃত হারেজ আলীর ইটভাটার পূর্ব পাশে এবং ২৬ এপ্রিল বেলা আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে ভবানীপুর ইউনিয়নের ঘোগা ব্রিজের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। ধনকন্ডি গ্রামের গোলাম রব্বানী ও তার ছেলে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধ করেন। গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তার বাবা তৎকালীন প্রভাবশালী মুসলিম লীগের এমপি গোলাম রব্বানী স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, দালালি ও পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনের নাম সরবরাহ ও হত্যা করেছেন। অধিকাংশ সময় হানাদারদের গাড়িতে চলাফেরা করতেন। তাই তিনি এলাকায় দালাল হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
‘পাকহানাদাররা ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বেলা ১০টার দিকে শেরপুর শহরে ঢুকে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও গোলাগুলি শুরু করে। এ সময় সাইফুল ইসলাম ও তার মামাতো ভাই কাইয়ুমসহ কয়েকজন প্রথম ঘটনাস্থল বাগড়া কলোনির ইটভাটার কাছে গিয়ে দেখতে পান পাক আর্মিরা ৩০-৩৫ জন বাঙালিকে লাইন করে দাঁড় করে রেখেছে। তখন গোলাম রব্বানী ও গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বাঙালিদের ভারতীয় দালাল বলেন। একথা বলেই সিরাজ হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে দুই রাউন্ড গুলি করেন। এতে লাইনের সামনে থাকা বাগড়া কলোনি গ্রামের দেরাজ মণ্ডলের ছেলে আজিজার মণ্ডল ও তার ছেলে সাত্তার মণ্ডল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেদিন পাকসেনাদের ব্রাশফায়ারে আলী আকবর, আজিজার মণ্ডল, ছেলে সাত্তার মণ্ডল, আফজাল শেখ, আয়েজ মণ্ডল, তার ছেলে আকবর মণ্ডল, দুলু মণ্ডল, জহির মণ্ডল, মোফাজ্জল মণ্ডলসহ ২৫-২৬ জন মারা যান। এ ঘটনার সাক্ষী জাবেদ আলী পরদিন ঘোগা ব্রিজের ওপর অন্তত ৩৫০ জন বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করানো দেখেন। তখন গোলাম রব্বানী ও গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তাদের দালাল আখ্যায়িত করেন। সিরাজ তার বন্দুক দিয়ে প্রথমে গুলি করেন। এরপর তাদের নির্দেশে পাকহানাদাররা ব্রাশ ফায়ার করে। এতে কোমরে গুলি লেগে জাবেদ আহত হন। সেখানে জাবেদের ভগ্নিপতি মোতাচ্ছের প্রামাণিক, তার বাবা মোসলেম প্রামাণিক, আব্বাস, বিশা শেখ, তার বাবা ময়েন শেখ, চণ্ডিপুরের কলিম শেখ, বগুড়া শহরের মেহের আলী শেখসহ অন্তত ৩০০ জনকে হত্যা করা হয়। পরে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নির্দেশে লাশগুলো ঘোগা ব্রিজের দক্ষিণ পাশে গভীর গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’
বাদী সাইফুল ইসলাম (৬৫) আরও জানান, তিনি ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর পেঁচুল গ্রামের মোজাফফর হোসেন (৬৩), বিরইল গ্রামের জাবেদ আলী (৮৫), একই গ্রামের চাঁন মাহমুদ (৭৩), চন্ডিপুর বিরইল গ্রামের আবদুল বাছেদ (৬৫), একই গ্রামের নুরুল ইসলাম মীর (৬০), সুজাব আলী (৭৩), ঘোগা গ্রামের আবদুস সামাদ (৭৪), একই গ্রামের জগত আলী কাজী (৬৫), ছোনকা গ্রামের আবদুল কাদের শেখ (৮৩), বিষ্ণুপুর গ্রামের আলতাব আলী শেখসহ (৭৮) ১১ জন সাক্ষী বগুড়ার আদালতে এফিডেভিট করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আরও অনেক সাক্ষী পাওয়া গেছে। যারা স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দেবেন। সাক্ষীরাও তদন্ত সাপেক্ষে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে গ্রেফতার এবং তদন্ত সাপেক্ষে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।’
আরপি/এসআর
বিষয়: সাংসদ সিরাজ মানবতাবিরোধী অপরাধ অভিযোগ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: