রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


সান্তাহারে নীরবে মানব সেবায় আফজাল


প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২০ ০১:৩৮

আপডেট:
১৮ জুন ২০২০ ০১:৪০

ছবি: সান্তাহারে নীরবে মানব সেবায় আফজাল হোসেন সরদার

মানুষের জন্য পাঁচ যুগেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে বগুড়ার সান্তাহারে আফজাল হোসেন সরদার। তার একান্ত প্রচেষ্টায় এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে সুখ শান্তি বজায় রয়েছে।

এলাকার ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে গড়ে তুলে শিক্ষিত সমাজ, সচল হোক অর্থনীতির চাকা। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে অনেক কিছুই সম্ভব নয়। জনগনের ভালবাসা, জনগনকে নিয়ে পথচলা আর এখন পর্যন্ত তিনি হাঁটছেন, স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন বুনছেন মানব সেবার। যা সব সময়ই করে এসেছেন।

সান্তাহার পৌরসভার পার্শ্বে বোয়ালিয়া ইউনিয়নের দোগাছী গ্রামের বাসিন্দা। ১৯২৭ সালের ৩ মার্চ সেই গ্রামে জন্মগ্রহন করেন আফজাল হোসেন সরদার। বাবা হাজী মৃত জহির উদ্দিন সরদার পেশায় একজন গৃহস্থ পাশাপাশি রেলওয়ে চাকুরী করতেন। মা আয়মন বিবি ছিলেন একজন গৃহিনী। উনারা চার ভাই আর এক বোন। উনার বাবার সন্তানের মধ্যে তিনি প্রথম সন্তান।

গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক এবং সান্তাহার কলসা আহসানউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অল্প বয়সে সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার কারনে পড়াশুনা বেশি এগিয়ে নিতে পারে নি। সকল স্তরেই তিনি শিক্ষকদের অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন।

ছাত্র জীবনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনেক পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন। অনেক অনুষ্ঠানের সংগঠক ও পরিচালক হিসাবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। তার বড় ছেলে মৃত আতোয়ার হোসেন সান্তাহারে ব্যবসা করতেন। দ্বিতীয় ছেলে আকরাম হোসেন এখন নওগাঁতে ব্যবসা করেন। তৃতীয় ছেলে গোলাম মোস্তফা সুটু সান্তাহারে ব্যবসা করেন। তিনি সান্তাহার গ্রামীণ ফুডস এর ব্যাবস্থাপক পরিচালক এবং সান্তাহার পৌর যুবলীগ এর সভাপতি।

তার ছোট ছেলে আরফি প্রবাসী। সান্তাহার ও আশপাশের র্দীঘ এলাকা জুড়ে আলহাজ্ব আফজাল হোসেন সরদার একজন ভাল মানুষ হিসাবে ব্যাপক সমাদৃত। তিনি একজন দানশীল ও গরীব হিতৈষী বলেও সমাধিক পরিচিত। এলাকার মাদ্রাসা ও মন্দির সমূহে তার অনুদান বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এলাকার গরীব দুঃখীদের মাঝে সাধ্য মতো তার সহযোগীতার হাত সদা উম্মুক্ত।

শিক্ষা ক্ষেত্রে গরীব মেধাবীদের জন্য তার অনেক সহযোগীতার কথা বেশ প্রচলিত। পাঠ্য বই ক্রয় বা পরীক্ষার ফি বাবদ অনেক গরীব ছাত্র-ছাত্রী তার সহানুভূতির ছোঁয়া পেয়েছে। কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা-মাতা বা রোগাক্রান্ত গরীব তার শরনাপন্ন হয়ে বঞ্চিত হয়নি।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আফজাল সরদারের আগমন খুব পুরোনো, বলা চলে অনেক দিনের। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন এর সময় সান্তাহারে একটি জনসভা হয়েছিলো। সেই জনসভায় সে সময়ের দেশের বাঘা বাঘা জাতীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

যেমন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। ঐ জনসভায় তিনি অগ্রণী ভুমিকা রেখেছিলেন। তিনি সক্রিয় রাজনীতির শুরু করেছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ এর সাথে। বঙ্গবন্ধুকে খুব পছন্দ করতেন সে জন্য একপর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন।

এরপর থেকে নওগাঁ সদর থানার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এর উপদেষ্টা হিসাবে ছিলেন। তিনি নওগাঁ সদর থানার বোয়ালিয়া ইউনিয়ের ৩নং ওয়ার্ডের ১৯৬৩ সাল থেকে টানা দশ বছর মেম্বার ছিলেন। তিনি সান্তাহার ইউনিয়নে ( বতর্মান সান্তাহার পৌরসভা) ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বতর্মান সময় বয়সের ভারে তেমন কিছু করতে পারেন না।

আফজাল সরদার একজন শান্ত, ভদ্র বিনয়ী এবং সদালাপী মানুষ। যে কোনো স্তরের মানুষের সাথে তিনি সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে অভ্যস্ত। তিনি হাসতে এবং হাসাতে পটু। এই বয়সে এসেও মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে ভোলেন না।

এখনো তিনি নিজেকে সামাজিক কাজ গুলোর সাথে জড়িয়ে রেখেছেন। সান্তাহারে বর্ষীয়ান যে কয়জন মানুষ রয়েছেন। রাজনীতি এবং সামাজিক অঙ্গনে যাদের অবদান কখনও ভুলবার নয়। আলহাজ্ব আফজাল হোসেন সরদার তেমনই একজন মানুষ। আমরা তার দীর্ঘ জীবন এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

 

আরপি/আআ-১০



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top