রাজশাহী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্মার্টফোন আসক্তি

কোন পথে হাঁটছি আমরা?


প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০১৯ ১০:০৩

আপডেট:
৩১ আগস্ট ২০১৯ ১০:১৩

স্মার্টফোন আসক্তির প্রতীকি ছবি

আপনি পড়াশোনা করছেন কিংবা পেশাগত বা ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত, এরই ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্য স্মার্টফোন হাতে নিয়েছেন।

এরপর আপনার অজান্তেই স্মার্টফোনে কেটে গেছে বেশ খানিকটা সময়। এমনটি কি প্রায়ই ঘটেছে আপনার ক্ষেত্রে? 

আপনি কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন বা দেখতে গিয়েছেন কোনো কনসার্ট। সেখানে কি আপনি ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন? অথবা আপনি কী সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ছবি শেয়ার করে লাইক গুনতে শুরু করে দেন? আবার অনেকেরই লাইক ঠিকঠাক না পেলে মাথা খারাপ হবার জোগাড় হয়! 

স্মার্টফোনের প্রতি এমন আসক্তিকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘নোমোফোবিয়া’। অনেকেই এই সমস্যায় আক্রান্ত। 

স্মার্টফোনের প্রতি এমন মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি আমাদের কর্মদক্ষতা, সৃষ্টিশীলতা কমানোর পাশাপাশি সৃষ্টি করছে নানা দৈহিক ও মানসিক সমস্যার। 

স্মার্টফোন আসক্তির আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত জানার প্রচেষ্টা থাকছে। 

স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ভয়ংকর এক ব্যবসায়িক স্বার্থ 

আপনি  প্রয়োজনীয় কোনো ভিডিও দেখার জন্য ইউটিউবে গিয়েছেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন ভিডিওটির সাজেশনে আপনার পছন্দের কোন টপিকের ভিডিও সাজেশন দেখানো হচ্ছে। আপনি সেই ভিডিওটি চালু করলেন। এভাবে একের পর এক ভিডিও আসতে থাকল। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনি নিজের অজান্তেই ভিডিও দেখেই পার করে দিলেন। 

আর এই পুরো সময়টাতে ইউটিউব আপনাকে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করলো। 

আবার ধরুন, আপনি কিছুক্ষণ আগেই একটি বই সম্পর্কে গুগলে সার্চ করেছেন। এরপর সেখান থেকে ফেইসবুকে লগ-ইন করলেন এবং হঠাৎ আপনি খেয়াল করলে ফেইসবুক আপনাকে আপনার সার্চ করা বইটির ই-কমার্স বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে! 

আবার নিউজফিডে আপনার পছন্দের বিষয়বস্তুর উপর সাজানো কনটেন্ট প্রদর্শিত হচ্ছে। ফলে আপনি মজা ভরে সেগুলো দেখতে লাগলেন, কেটে গেল অনেকটা সময়।

এগুলো আসলে করা হয়ে থাকে এলগোরিদম ব্যবহার করে। এর পেছনে এক ভয়ানক ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। আপনাকে যত বেশি সময় স্মার্টফোনে ধরে রাখা যাবে অর্থাৎ আপনি যত বেশি সময় সোশ্যাল সাইটগুলোতে ব্যয় করবেন, আপনাকে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তাদের অর্থ উপার্জন তত বাড়বে। 

আবার এগুলোতে আসক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ভালোমানের স্মার্টফোনের চাহিদাও জন্মাবে। আবার ভালো মানের স্মার্টফোন পেলে আপনার গেইমিং আসক্তিও বেড়ে যেতে পারে অন্যদের মত। মানে কি হতে পারে না সেটি ভাবাই কঠিন।  

আসলে বানিজ্যিক স্বার্থের এই স্মার্টফোন নির্মাতা, প্রযুক্তি নির্মাতা থেকে শুরু করে সোশ্যাল সাইট, গেইম ডেভেলপার এমনকি ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবাদাতাদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ক্রিয়াশীল থাকে। 

আসক্তিতে ক্ষতিটা আসলে কোথায়? 

স্মার্টফোন আমাদের অনেক কাজকেই সহজ করে দিয়েছে-এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। পেশাগত অনেক কাজও এখন স্মার্টফোনের কল্যাণে অনেক সহজেই করে ফেলা যায়। এমন উদাহরণ নেহায়েত কম নয়।

তবে আমরা যখন স্মার্টফোনের উপর মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ি, তখন তা আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় আমরা অহেতুক ব্যয় করে ফেলি। 

কিছু পরিসংখ্যান দেখি  

সংবাদমাধ্যম ব্যাংকমাইসেল ও দ্যা গার্ডিয়ান একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। সেগুলো দেখলে বুঝতে পারবো আমরা কতটা ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছি। 

  • ব্যবহারকারীরা দৈনিক গড়ে ৪৭ বার তাদের স্মার্টফোন চেক করেন, বছরে তা সংখ্যায় দাঁড়ায় ১৭ হাজার ১৫৫ বার। দৈনিক টাচ বা ক্লিকের সংখ্যা প্রায় ২৭০০ বার। 
  • ৮৫ শতাংশ ব্যবহারকারী পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।
  • ৮০ শতাংশ ব্যবহারকারীরা বিছানায় ঘুমাতে যাবার মুহূর্তে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। 
  • ১৮-২৯ বছর বয়সী একজন ব্যবহারকারী গড়ে দৈনিক ৩ ঘণ্টা স্মার্টফোনের পিছনে ব্যয় করেন। 

আসক্তির ফলাফল 

স্মার্টফোনে এমন আসক্তি যেমন আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে, তেমনি সৃষ্টি করছে নানা মানসিক ও দৈহিক যোগ। এটি নিয়ে অনেকগুলো গবেষণা হয়েছে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, স্মার্টফোনে আসক্তির ফলে মানুষের আবেগ কমে যায়, রাগ ও হতাশা বৃদ্ধি পায়, অনিদ্রার সৃষ্টি হয়। 

যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, মা-বাবার অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার পারিবারিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়। 

শিশুদের ক্ষেত্রে এই আসক্তির প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ‘ট্যাবলেট ফর স্কুল’ জানিয়েছে স্মার্ট ডিভাইস আসক্তিতে ঘুম কমছে শিশুদের। 

স্মার্টফোন আসক্তি তাদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে-এমন তথ্য উঠে এসেছে একদল মার্কিন গবেষকের গবেষণায়! এছাড়া এই আসক্তি মানুষের সামজিক ও পারিবারিক বন্ধন হালকা করে দিচ্ছে। 

তবে এখানে আরও উল্লেখ্য যে এই আসক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই ভালো কিছুও করে ফেলেছেন। গেইম খেলেও এখন অর্থ উপার্জন করা যাচ্ছে। শুরু হচ্ছে নানা গেইমিং প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কিশোর বয়সেই লাখপতি বনে যাচ্ছে অনেকে।

আবার স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট আসক্তি থেকেই অনেকে শিখে ফেলছেন নিত্যনতুন সব স্কিল, যা পেশাগত দক্ষতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

পরের পর্বে স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পাবার কিছু টিপস থাকবে। 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top