রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বৈধভাবে মোবাইল সিম দেয়ার উদ্যোগ


প্রকাশিত:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৩৬

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪০

সংগৃহিত

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বৈধভাবে মোবাইল সিম দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অবৈধভাবে সিম ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধ, রোহিঙ্গাদের দ্রুত সনাক্ত করা, বাংলাদেশের ভেতর মিয়ানমারের মোবাইল নেটওয়ার্ক অকার্যকর করা এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানবিক বিষয় বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত আসছে।

ইতোমধ্যে বিটিআরসির একটি কারিগরি কমিটি এ বিষয়ে কার্যক্রম শেষ করেছে। কমিটি সরেজমিনে ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে। রোহিঙ্গাদের সিম দেয়ার কারিগরি দিকের বিস্তারিত তুলে এনেছে। তবে রোহিঙ্গাদের সিম দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সশস্ত্রবাহিনীবিভাগ, আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিমতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি রোহিঙ্গাদের যেনো খুব পরিকল্পিতভাবে সিম দিতে পারি এবং তাদের মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করতে না হয়। আমরা তাদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ করে দেবো যেন সস্তায় তারা সিম ব্যবহার করতে পারে। এ বিষয়ে অনেকগুলো পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক এবং দেশীয় অবৈধ সংযোগ বন্ধে করণীয় কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে বিটিআরসির কারিগরি সহায়তা চায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এরপর বিটিআরসি একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি চলতি বছরের জুলাই মাসে সরেজমিনে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। এরপর তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়।

বিটিআরসির পর্যবেক্ষণ বলছে , বাংলাদেশের সরকারের নিয়ম অনুযাযী বাংলাদেশের মোবাইল সিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিম নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিবন্ধন ছাড়া সিম ব্যবহারের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কেন্দ্রিয়ভাবে ডেটাবেইজে ফ্যামিলি অ্যাটেসটেশন (এফসিএন) বা পরিবার প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখিত অভিন্ন ফ্যামিলি কাউন্টিং নাম্বার এবং স্মার্টকার্ড আইডি এর বিপরীতে সিম নিবন্ধন করে এই ফ্যামিলি কাউন্টিং নম্বর এবং স্মার্টকার্ড আইডি নম্বর সংরক্ষণ করলে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সিম ব্যবহারকারীর পরিচিতি নিশ্চিত করা যাবে।

প্রতিটি ক্যাম্পে কী পরিমাণ পরিবার বা শরণার্থী আছে তার সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় হতে দেয়া নম্বরের ডেটাবেইজ এবং এফসিএন নম্বরের ডেটাবেইজের বিস্তারিত তথ্য নেয়া।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সশস্ত্রবাহিনীবিভাগ, আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিমতের ভিত্তিতে যদি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সিম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ৫টি করে সিম দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের এফসিএন নম্বরের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫টি সিম দেয়া যায়। যেখানে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সিম দেয়া হবে। ডকুমেন্ট বা প্রমাণপত্র হিসেবে থাকবে রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্মার্টকার্ড আইডি এবং এফসিএন নম্বর।

প্রতিটি ক্যাম্পে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সিমকার্ড বিক্রিতে অপারেটরা আলাদা আলাদা রেটেইলারের ব্যবস্থা রাখবে।

রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্লাটফর্মে (সিবিভিএমপি) রোহিঙ্গাদের আলাদা আইডি সংযোগ রাখা হবে।

মোবাইল অপারেটররা যেন সহজে ও দ্রুত সিম সনাক্ত করতে পারে সেজন্য রোহিঙ্গাদের কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক একই মোবাইল নম্বর সিরিজ বরাদ্দ থাকবে।

ক্যাম্পের এলাকা জিও ফেন্সিং কাভারেজের আওতায় থাকবে। যাতে ক্যাম্প এলাকার বাইরে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সিম ব্যবহার না করতে পারে।  

কক্সবাজারের উখিয়ায় ২৬টি এবং টেকনাফে ৮টি মিলে মোট ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে মোট রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৮০ টি।

এসব রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর হতে ফ্যামিলি অ্যাটেসটেশন বা পরিবার প্রত্যয়পত্র এবং ১২ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী প্রত্যেকের স্মার্টআইডি কার্ড দেয়া হয়েছে।

ফ্যামিলি অ্যাটেসটেশন বা প্রত্যয়নে একটি অভিন্ন ফ্যামিটি কাউন্টিং নম্বর আছে। যার মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে আলাদাভাবে সনাক্ত করা যায়। সঙ্গে রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় হতে দেয়া নম্বর, পরিবার সদস্য সংখ্যা এবং পরিবারের সব সদস্যের নাম, ছবি, জন্ম তারিখ, প্রত্যেকের মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি তথ্য রয়েছে।

স্মার্টকার্ড আইডিতে রয়েছে স্মার্টকার্ড নাম্বার, ইউএনএইচসিআর হতে দেয়া নম্বার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় হতে দেয়া নম্বর, এফসিএন নম্বার এবং নাম, জন্মতারিখ, পিতা ও মাতার নাম।

বিটিআরসির প্রতিবেদন বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রতিটি ক্যাম্পে ১০ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। এরমধ্যে একাধিক সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যাও অনেক।

সে হিসেবে ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩ লাখ ৪০ হাজার হ্যান্ডসেট বা মোবাইল রয়েছে। যেখানে একাধিক সিম ব্যবহারের হিসাব ধরলে সিমের সংখ্যার স্বাভাবিকভাবেই মোবাইল সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাক সত্ত্বেও তারা মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করছে। রোহিঙ্গারা স্থানীয় জনগণের যোগসাজশে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিদের রেজিস্ট্রেশন করে সিম ব্যবহার করছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রেজিস্ট্রেশনকারী ব্যক্তি এবং সিম ব্যবহারী ব্যাক্তি আলাদা।

রোহিঙ্গারা এসব সিম ব্যবহার করে অনেক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্প এলাকায় মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হওয়ায় বাংলাদেশের ভেতরে মিয়ানমারের অবৈধ সিম ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করে বিকাশ-নগদের মতো মোবাইল ব্যাকিং সেবাও নিচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের সিম দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকের নামে রেজিস্টার্ড সিম অবৈধভাবে ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হতে পারে। যেখানে ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, এনজিও ও ক্যাম্প এলাকায় বসবাস করা বাংলাদেশী নাগরিকদের নম্বরগুলো হোয়াইট লিস্ট করা, রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত সিম ফেরত নেয়া এবং সিম ব্যবহারকারী রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তা বন্ধ করা । এছাড়া এসআরপি লজিক প্রণয়ন করে ক্যাম্প এলাকায় যেখানে-সেখানে সিম ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার কথাও বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে দেশের ভেতরে মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক অকার্যকর করতে ক্যাম্প এলাকায় নিবিড় মনিটর, এনটিএমসি-বিটিআরসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কমিটি জ্যামার স্থাপনসহ কারিগরি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার বিষয় রয়েছে।

সূ্ত্র:টেক শহর

আরপি/ এসএইচ ১১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top