আদমদীঘির মানসিক ভারসাম্যহীন আলীবর ও মোস্তফা
অসহায় হলেও তাদের মনে যেন অফুরন্ত বিনোদন
বৈচিত্রময় এই পৃথিবীর বিচিত্র কিছু মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাদের মনে কোন ভাবনা চিন্তাই যেন নেই। আছে শুধু তাদের মনে অফুরন্ত ভালোবাসা ও বিনোদন। তারা সারাদিন ঘোরাফেরা করে যেখানেই একটু সুযোগ পায় সেখানেই যেটুকু খাবার পায় তা খেয়েই যেন তারা শান্ত। নেই কোন চিন্তা ভাবনা এমন সব মজার মানুষের দেখা বা ঘটনা নজরে পরে যা অস্বাভাবিক।
এমনই বৈচিত্রময় দুই জনকে চলাফেরা করতে দেখা যায় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদরের বিভিন্ন রাস্তা ঘাটে। মাথায় তাদের বড় বড় চুল, মুখে দাড়ি আর গায়ে জোড়াতালি দেয়া কাপড়। দিনের পর দিন অনাহারে-অর্ধাহারে একই ভাবে রাস্তায় রাস্তায় মানসিক ভারসাম্য হয়ে বছরের পর বছর ধরে ঘুরছে এক সময়ের টকবগে আলীবর ও গোলাম মোস্তফা সরদার ওরফে মোস্ত। উপজেলা সদরের গোড় গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল প্রামানিকের ছেলে আলীবর (৫২) এবং মৃত মোসলিম সরদারের ছেলে গোলাম মোস্তফা সরদার ওরফে মোস্ত (৫০)।
এদের দু’জনের বাড়ীই গোড় গ্রামে। ছোটবেলায় আলীবর ও গোলাম মোস্তফার অসংখ্য বন্ধু-বান্ধবসহ অনেক আত্নীয় স্বজন ছিল। এখন আলীবর ও গোলাম মোস্তফা ভারসাম্যহীন বলে আর কেউ তাদের খোজ খবর রাখে না। না বন্ধু-বান্ধব, না রক্তের কেউ কিংবা আত্নীয় স্বজন। নিয়তির নির্মম পরিহাস ভারসাম্যহীন আলীবর থানার পাশে ইয়াছিন আলীর পরিত্যক্ত পুরনো মাটির বাড়ীর বারান্দায় রাত্রী নেমে আসলে অসংখ্য মশার কামড়ের যন্ত্রণা নীরবে সহে ঘুমায়। আর পাগল নামে পরিচিত গোলাম মোস্তফা সারাদিন ঘুরেফিরে রাত্রী নেমে এলে বাজারের কোন এক মার্কেটের বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়ে। অথচ এদের প্রত্যেকেরই পরিবার আছে, আছে তাদের রক্তের সর্ম্পকের আত্নীয়দের বাড়ীঘর। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলেও কখনো এরা কারো কাছ থেকে টাকা কিংবা খাবার চায় না। মন যখন শান্ত থাকে তখন এরা মানুষের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদমদীঘি উপজেলা সদরের গোড় গ্রামের বাসিন্দা ভারসাম্যহীন আলীবরের বাবা আবুল প্রামানিক অনেক দিন আগে মারা যায়। তার বাবা মারা যাবার পর তার মাও পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে। প্রায় ২৫ বছর আগে আলীবরের মাও মারা যায়। মা পাগল থাকা অবস্থায় আলীবরও ভারসাম্যহীন পাগল হয়ে পড়ে। তখন সকলেই তাকে আলীবর পাগলা বলে ডাকে।
এদিকে গোলাম মোস্তফা সরদার ওরফে মোস্তর ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানা যায়, গোড় গ্রামের মোসলিম সরদারের ছেলে সে। গোলাম মোস্তফা সরদার মোস্ত জন্মের পর থেকে যুবক হওয়া পর্যন্ত ভালোই ছিল। পরিবারের লোকজন প্রায় ২০ বছর আগে যুবক বয়সে গোলাম মোস্তফার বিয়ে দেয়। বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে তার একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান হয়। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তার শিশু মেয়ে ও ছেলে বড় না হতেই তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যীন হয়ে যায়। এই মানসিক যন্ত্রণা ও বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে ধীরে ধীরে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়ে গোলাম মোস্তফা মোস্ত হঠাৎ পাগল হয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে সে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে রেখে বাড়ী ছেরে বাহিরে বাহিরে ঘুরে বেড়ায়। এমন অবস্থায় গোলাম মোস্তফার স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিয়ে ছেলে-মেয়েকে দাদা-দাদীর কাছে রেখে স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে যায়। গোলাম মোস্তফা সরদারকে এলাকার সবাই এখন মোস্ত পাগল বলেই চেনে।
এদের দুজনের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে বাড়ী ফেরার জন্য কিন্তু কোন ভাবেই বাড়ীতে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে তারা। এখন তারা মানষিক ভারসাম্যহীন পাগল হওয়ায় কেউ তাদের খবর রাখে না। এই পৃথিবীতে আরো কত না পাগল রয়েছে, কে কার খবর রাখে। এলাকার অনেক অভিজ্ঞজনের অভিমত যদি তাদের কে সঠিক চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের ভাল আচরন এবং যত্ন নিলে হয়তো এসব মানষিক ভারসাম্যহীন আলীবর ও গোলাম মোস্তফা মোস্তকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব।
আরপি/এসআর-০৭
বিষয়: আদমদীঘি মানসিক ভারসাম্যহীন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: