রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

৫ ডলারে শুরু, এখন তার আয় চার হাজার ডলার


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২০ ১৬:৩৩

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১১:৩৩

ছবি: সংগৃহিত

শুরুটা হয়েছিল পাঁচ ডলার দিয়ে। এখন মাসিক আয় চার হাজার ডলার নাটোরের ফ্রিল্যান্সার মাসুম প্রামাণিকের। দুই বছরে আপওয়ার্ক, ফাইবার এবং স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।

তাঁর ‘স্টোরি আইটি’ কম্পানিতে কাজ করছেন ১৬ তরুণ-তরুণী। এই ফ্রিল্যান্সারের কথা জানাচ্ছেন ইমরান হোসেন মিলন

যেভাবে শুরু
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া কালিকাপুর গ্রামের আবুল প্রামাণিক ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে মাসুম। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর পর পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে।

সেই আগ্রহ থেকেই ডিপ্লোমা শেষ করে ঢাকায় গিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে, উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে। ২০১৩ সাল থেকেই উদ্যোক্তা হতে চেয়েছেন মাসুম প্রামাণিক।

তখন পড়ালেখার পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে একটি কোচিং সেন্টারও খুলে বসেন। কিন্তু যার টান কম্পিউটারের প্রতি তিনি কি আর অন্য কোথাও আটকে থাকতে পারেন? তাই সেই পাট অল্পেই চুকে যায়।

সে বছরই প্রথম তিনি ডোল্যান্সারে অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই কাহিনিও কিছুটা নাটকীয়। মাসুম বলেন, ‘আমার প্রথম অ্যাকাউন্ট খোলার সময় বাধে বিপত্তি। তখন আমার যে জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল সেটি সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু সেটা নিয়ে মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না। তাই প্রথম অ্যাকাউন্ট খুলি আমার বড় ভাই রতন প্রামাণিকের পরিচয়পত্র দিয়ে।’

শুরুতে ভালোই চলছিল। দুই মাসে কিছু আয়ও করে ফেলেন। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রাপ্য কিছু টাকা আর দেয়নি। বরং তাঁর সঙ্গে তারা যোগাযোগই বন্ধ করে দেয়। আর সেটা ছিল মাসুমের জন্য বিশাল একটা ধাক্কা। অবশ্য সেটা একধরনের শিক্ষাও ছিল বটে। সেখান থেকে অনেকটা ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছেন তিনি।

আবার শুরু হয় মাসুমের কাজ। এবার যেসব বিষয়ে খুব ভালো জানাশোনা দরকার ছিল সেসবের পেছনে সময় দেন। রীতিমতো ‘গবেষণা’ শুরু করেন ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের ওপর।

পেয়ে যান সফলতাও। সব মিলিয়ে তখন তিনি ফাইবার ও আপওয়ার্কের পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, টেকনিক্যাল সার্ভিস, ওয়েব ডিজাইনে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন।

পাঁচ ডলার থেকে শুরু
এখনকার ‘আপওয়ার্ক’ তখন ছিল ‘ওডেস্ক’, সেখানেই মাসুমের অ্যাকাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু বলা যায়। তিনি বলেন, ‘সেবার কাজ শুরুর পর আমার প্রথম আয় ছিল মাত্র পাঁচ মার্কিন ডলার। সেই আয়ের কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

সেটা দিয়েই ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমার আয়ের সূচনা।’ এরপর ধীরে ধীরে বিদেশি গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরেছেন নিজেকে। আর বাড়িয়েছেন নিজের আয়ের পরিমাণও। মাসুমের আয়ের পথ আরো প্রশস্ত হয়ে এখন মাসিক সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছিলেন প্রশিক্ষকও
মাসুম প্রামাণিক দীর্ঘ সময় সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তিনি সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।

এরপর তিনি স্কিলস টু সাক্সিসিড প্রজেক্টে এবং স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রকল্পে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে এর পাশাপাশি তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজও চালিয়ে গেছেন।

টিম থেকে কম্পানি
২০১৭ সালে মাসুম ভাবলেন যদি একটা টিম করে কাজ করা যায়, তাহলে কাজগুলো আরো সহজ হয়। এমনকি এর মাধ্যমে আয় আগের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়ানোও সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ‘মনে মনে আমার একটা ইচ্ছা তো ছিলই আইটি কম্পানি তৈরির। সেই ইচ্ছার বাস্তবায়ন এবং সম্মিলিতভাবে আয়ের পথ আরো বাড়াতে ২০১৭ সালে চারজনের একটি টিম করে কাজ শুরু করি।’

এক এক করে দলে যোগ হতে থাকল নতুন নতুন সব মুখ। বাড়তে থাকে টিমের পরিসরও। এমন করে এখন পুরোদস্তুর এক কম্পানিই খুলে ফেলেছেন মাসুম।

যেমনটা তিনি বলছিলেন, ‘২০১৭ সাল পর্যন্ত আমরা একটা টিম হিসেবেই কাজ করে আসছিলাম। কিন্তু ২০১৯ সালে অনেকটা প্রয়োজন থেকেই একটা কম্পানি শুরু করার চিন্তা করি। এমনকি সে বছর থেকেই শুরু করি আমার প্রতিষ্ঠান ‘স্টোরি আইটি’।

কাজ হয় চার প্রফাইল থেকে
শুরুতে মাসুম একটি প্রফাইল খুলে কাজ করছিলেন। পরে ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন প্রফাইল। পরে আরেকটি প্রফাইল যুক্ত করেন তালিকায়। সেই সংখ্যাটা ২০১৭ সালে এসে দাঁড়ায় চারে। মাসুম বলেন, ‘আগে একা কাজ করতাম, তখন একটি প্রফাইল থেকে কাজ করতাম। কিন্তু যখন টিম শুরু করি তখন থেকে মোট চারটি প্রফাইল থেকে কাজ শুরু করি।’

যত কাজ করেছেন
মাসুম প্রামাণিক কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু কাজ করেছেন। তিনি জানান, ‘২০১৮ থেকে ২০২০ সাল—এই দুই বছরে আপওয়ার্কে ২৫০টি, ফাইবারে ২০০টি এবং স্থানীয় ১০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।

এখন তিনি মার্কেটপ্লেসের বাইরে কানাডীয় এজেন্সি সিএনএস, অস্ট্রেলীয় এজেন্সি ভেট এসই, আমেরিকান এজেন্সি ব্রাইট হাউসের সঙ্গে কাজ করছেন। এ ছাড়া অ্যাফিলিয়েট, অ্যাডসেন্স সাইট করেছেন ২০টির বেশি।

জেনে-বুঝে ফ্রিল্যান্সিং
অনেকেই মনে করেন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুললেই আয় করা সম্ভব। বিষয়টা আসলে এমনটি নয়। এ জন্য আপনাকে সঠিক কাজটা জানতে হবে। কাজ জানা না থাকার জন্য তরুণদের আসলে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

এ ক্ষেত্রে আসার আগে অন্তত নিজেকে প্রস্তুত করে আসার পরামর্শ দেন মাসুম প্রামাণিক। নিজের প্রতিষ্ঠান স্টোরি আইটি নিয়েও তিনি বেশ আশাবাদী। কেননা সেখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সবাই তরুণ। তরুণদের নিয়েই তাঁর প্রতিষ্ঠানকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।

 

আরপি / এমবি-৭

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top