রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে আসছে ফাইভজি


প্রকাশিত:
২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৬:০০

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০০:১৯

কিনোট দিচ্ছেন হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান: ছবি

গত দু’দিনে সারাবিশ্ব হতেই তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইল নেটওয়ার্ক খাত বিশেষজ্ঞ-বিশ্লেষক, উদ্যোক্তারা এসে জড়ো হয়েছেন ব্যাংককে। এসেছেন খাতের বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা ও সংগঠনের নেতারাও।

উপলক্ষ্য, সোমবার হতে শুরু হওয়া গ্লোবাল মোবাইল ব্রডব্যান্ড ফোরাম-২০২২ বা এমবিবিএফ- এ যোগ দেয়া। যার আয়োজক হুয়াওয়ে।

আর ফাইভজি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকা এই চীনা কোম্পানিটি চমক দিতে সিদ্ধহস্ত । ইনোভেশনের ক্ষেত্রে এ কাজটি বরাবই তারা ভালই করে। তাহলে এবার কী চমক, যেখানে আগের এবিবিএফে হাজির হয়েছিলো এই প্রযুক্তিতে নিজেদের ও অংশীদারদের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত সফলতার অনেক উদাহরণ সামনে এনেছিলো তারা।

তাই স্বাভাবিকভাবেই বিশ্লেষক বা ব্যবসায়ী, প্রযুক্তি বিশ্বের চোখ এখানে, কী করছে হুয়াওয়ে ? কোন পথ দেখাবে তারা ?

এবার ১৩তম এমবিবিএফে ফাইভজিই ভবিষ্যত, এর দীর্ঘ যাত্রার এক রূপরেখা তুলে ধরলো হুয়াওয়ে। ব্যাংককের বিশাল কুইন স্রিকিট ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার (কিউএসএনসিসি)-এর পুরোটা ‍জুড়েই আয়োজন ছিলো এবারে।

এবিবিএফেই ফাইভজি প্রযুক্তির ব্যবসায়িক সম্ভাবনা ও ‍উদ্ভাবনে আশা জাগানিয়া নতুন পথের কথা বলেছিলেন আয়োজকরা।

হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু তাঁর মূল বক্তব্যে বলছিলেন, ব্যবসা ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উম্মোচন করছে ফাইভজি ।

কেন হু তাঁর কিনোটে তুলে ধরেন ফাইভজির বৈশ্বিক গতিপথ।

তিনি জানালেন, এই অক্টোবরপর্যন্ত বিশ্বের ২৩০টিরও বেশি ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে ফাইভজি সেবা চালু করেছে। সব মিলিয়ে এই খাতে ৭০ কোটির বেশি গ্রাহকদের জন্য ৩০ লাখের বেশি ফাইভজি বেইজ স্টেশন হয়েছে।

তিনি দেখান, টেলিযোগাযোগ খাতে বেশিরভাগ ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানের মূল রাজস্ব আয় হয় গ্রাহক সেবা থেকে। সব জায়গায় ফাইভজির সম্প্রসারণের ফলে গ্রাহকরা নতুন নতুন সেবা নিচ্ছন এবং এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। বাড়ছে হাই-ডেফিনেশন ভিডিও ট্রাফিক।

‘ফাইভজি প্রযুক্তির ব্যাপক গতি ও কম লেটেন্সি সুবিধা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন অনেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এসেছে যেখানে ব্যবহারকারীর গড় ডেটা ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে। আর এতে অপারেটরের গড় রেভিনিউ পার ইউজার (এআরপিইউ) ২০-৪০ শতাংশ বাড়ছে’ উল্লেখ করেন তিনি।

হু জানান, ফাইভজি মোবাইল অপারেটর বা ক্যারিয়ারের রাজস্বের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিটুবিতে (বিজনেস-টু-বিজনেস) ফাইভজির ব্যবহার দারুণ সাফল্য এনেছে। তেল-গ্যাস, উৎপাদন এবং যোগাযোগ খাতের অভুতপূর্ব উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি উদাহরণ হিসেবে দেখান, ২০২১ সালে চীনা ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ হাজারেরও বেশি ফাইভজি প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন চাইনিজ ইউয়ান (প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) নতুন রাজস্ব আয় করেছে। আর প্রকল্পগুলো থেকে সংশ্লিষ্ট ডেটা ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতের চেয়ে ১০ গুণ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। বিটুবিতে ফাইভজির ব্যবহারকে ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে দ্রুতবর্ধনশীল রেভিনিউ খাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নতুন নতুন সেবা, অ্যাপ্লিকেশন ও বিজনেস মডেল প্রতিষ্ঠা করছে ফাইভজি, যা এই খাতে সুযোগ বৃদ্ধির উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

হুয়াওয়ের এই রোটেটিং চেয়ারম্যান বলছিলেন, ফাইভজির এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। নেটওয়ার্কের মান উন্নত করা, কাভারেজ বাড়ানোসহ নেটওয়ার্ক এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তা বিভিন্ন রকম ব্যবহারকারীর জন্য সর্বোচ্চ সেবা অভিজ্ঞতা পান।

এখানেও তিনি উদাহরণ হিসেবে টানেন, চীনা ক্যারিয়ারগুলো প্রথম ইনপুট দেয়ার ক্ষেত্রে দেরি করা ৫০ শতাংশ ও ফ্রেম ফ্রিজ হয়ে যাওয়া ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার মাধ্যমে টিকটক ও অন্যান্য জনপ্রিয় ভিডিও সার্ভিসের নেটওয়ার্ককে অপটিমাইজ করেছে। ভিডিও অভিজ্ঞতা দিয়ে ফাইভজির প্রতি নতুন ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করেছে এবং ভিডিও দেখার হারকে দ্বিগুণ করেছে।

৫ দশমিক ৫জি বিকাশের দিকে যাত্রা ফাইভজি সেবাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে ক্যারিয়ার ও এই খাতের অংশীদারদের সাথে কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফাইভজি প্রযুক্তির বিবর্তন হিসেবে ৫ দশমিক ৫জির চারটি ফিচার প্রস্তাব করেছে হুয়াওয়ে।

যেখানে রযেছে, ১০ জিবিপিএস ডাউনলিঙ্ক, ১ জিবিপিএস আপলিঙ্ক, ১০০ বিলিয়ন সংযোগে সহায়তা এবং নেটিভ ইন্টেলিজেন্স।

কেন হু বলছিলেন, নতুন নতুন উদ্ভাবন, অনেক ব্যান্ডউইথ ও কম লেটেন্সির কারণে ক্লাউড ও এআইয়ের (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সাথে ফাইভজির সমন্বয় করে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের জন্য অবারিত নতুন সেবার খাত আসবে।

‘যেখানে এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (এক্সআর), ক্লাউড গেমিং, স্বতন্ত্র গ্রাহকের জন্য উন্নত কল সেবা এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সেবা দিয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা দেবে মোবাইল ফোন অপারেটর বা ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো। যা নতুন আয়ের খাত তৈরি, কানেক্টিভিটির বাইরেও ক্যারিয়ারের জন্য সুযোগ তৈরি এবং ক্লাউড সেবা ও সিস্টেম ইন্টেগ্রেশনের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করবে।’

তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি ডিজিটালাইজেশন। ডিজিটাল রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ফাইভজি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আর এসব অর্জনে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান তিনি।

ফোরামের উদ্বোধনী দিতে বক্তব রাখেন জিএসএমএ এর চিফ মার্কেটিং অফিসার লারা দেওয়ার। তিনি সবাই মিলে একসঙ্গে ফাইজি বিশ্ব গড়ে তোলার গুরুত্ব নিয়ে উপস্থাপনা দেন।

এছাড়া এতে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন দেশের মোবাইল ফোন অপারেটদের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। যারা ফাইভজির অভিজ্ঞতা, ব্যবসায়িক সফলতাসহ ইত্যাদি প্রেক্ষাপট নিয়ে উপস্থাপনা রাখেন।

সূত্র: টেকশহর ডটকম

আরপি/ এসএইচ


বিষয়: ফাইভজি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top