রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

কয়েক আলোকবর্ষ দূরে থাকা কোনো ছায়াপথ থেকে ক্রমাগত সংকেত আসছে পৃথিবীতে


প্রকাশিত:
২৬ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৫৫

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১০:৫৬

 

 

এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানীরা। আবারও এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে তারা। তারা জানিয়েছেন, কয়েক আলোকবর্ষ দূরে থাকা কোনো ছায়াপথ থেকে ক্রমাগত সংকেত আসছে পৃথিবীতে। মহাকাশ গবেষণার ব্যবহৃত শক্তিশালী টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে সেই সংকেত।

বিজ্ঞানের ভাষায় এই সংকেতকে বলে ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্টস’বা এফআরবি। কোথা থেকে আসছে এই সংকেত-এই নিয়ে প্রবল আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। সেই ছায়াপথে কি পৃথিবীর মতোই গ্রহ রয়েছে। সেখানেও কি কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। তাহলে কি ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব রয়েছে-এই নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।

২০১৭ সাল প্রথম এই ধরনের একাধিক সংকেত ধরা পড়েছিল টেলিস্কোপে। বছর দুয়েক আগে যেসব সিগন্যাল আসছিল তার মধ্যে ২টি সংকেত ক্রমাগত আসছে ২০১৭ সাল থেকে। প্রাথমিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এই সংকেত আসছে আমাদের ছায়াপথের পাশের কোনো ছায়া পথ থেকে। যদিও তার দূরত্ব কয়েক আলোকবর্ষ।

গত জানুয়ারিতে এ রকমই এক রহস্যময় রেডিও সিগন্যালের সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। কানাডার এক টেলিস্কোপে ধরা পড়ে সেই অদ্ভুত রেডিও সিগন্যাল। কোনো এক দূরের গ্যালাক্সি থেকে সেই সিগন্যাল এসেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও ওই রেডিও সিগন্যালের সঠিক উৎস ও ধরন সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নন তারা।

১৩টি রেডিও বার্স্ট শোনা গিয়েছিল সেবার। একই উৎস থেকে একাধিক বার সেই সিগন্যাল আসছিল বলে জানা গিয়েছে। অন্তত ১৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূর থেকে সেই শব্দ শোনা যায়।

‘এফআরবি’ হলো এক ক্ষুদ্র আকারের রেডিও সিগন্যালের ঝলক। এখনও পর্যন্ত গবেষকরা মোট ৬০টিরও বেশি এফআরবি চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি রিপিট বা পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রতিদিন আকাশে কয়েক হাজার এফআরবি ঝলক দেয়। এর কারণও ভিন্ন। হতে পারে, কোনো নিউরন স্টার খুব জোরে ঘুরছে। হতে পারে, দুটি নিউরন স্টার একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আবার এলিয়েনদের উপস্থিতির কথাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

স্টিফেন হকিংয়ের সতর্কবার্তা

ভিনগ্রহ থেকে আসা কোন রেডিও সংকেত পেতে পৃথিবীর প্রয়াসের কোন অন্ত নেই। কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ভিনগ্রহের সংকেত ফেরত দিতে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন
 
হকিং বলেন, ‘যদি আমরা কোন অগ্রসর সভ্যতার মুখোমুখি হই, তবে তা হবে অনেকটা কলম্বাস যখন আমেরিকায় রেড ইন্ডিয়ানদের সামনে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন তার মতো। আর আমরা যদি রেড ইন্ডিয়ানদের ভূমিকায় থাকি তবে ব্যাপারটা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর হবে না।’
 
‘স্টিফেন হকিংস ফেভারিট প্লেস’ নামক ওই অনলাইন ফিল্মটিতে হকিংয়ের একটি উক্তি ছিলো ‘তারাদের দিকে তাকিয়ে মাঝেমাঝেই আমার মনে হয় উপর থেকে আমাকেও কেউ দেখছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বয়স যত বাড়ছে, ততই মনে হচ্ছে মহাশূন্যে আমরা নই।’
 
তিনি বলেন, ‘একদিন হয়তো ‘গ্লিজ-৮৩২সি’-এর মতো কোন গ্রহ থেকে সত্যিই এলিয়েনদের সংকেত চলে আসবে। তবে, এর ফিরতি বার্তায় আমাদের আরো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’
 
গ্লিজ-৮৩২সি গ্রহ সম্পর্কে জানা যায়, এটি আমাদের ১ লাখ আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত মিল্কিওয়েতে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। গ্রহটি তার কক্ষপথে প্রতি ৩৬ দিনে একবার একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়েও ছোট, তুলনামূলক আলো কম এবং সূর্যের চেয়ে শীতল। তবে, গ্লিজ-৮৩২সি গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর প্রায় পাঁচগুণ বড়। ২০১৪ সালে রবার্ট হুইটেনমায়ার নামে এক বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একদল গবেষক এই গ্রহটি আবিষ্কার করেন। যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে এমন অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা।
 
তবে, এই গ্রহকে উপলক্ষ করে স্টিফেন হকিং আমাদের যে বার্তা দিলেন তা হলো- এমন সদৃশ কোন গ্রহ থেকে যদি আমাদের আগেই কোন প্রাণ পৃথিবীতে সংকেত পাঠায় তবে নিঃসন্দেহে তারা আমাদের চেয়ে অগ্রগামী। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, এমন হতে পারে যে তারা আমাদের দাসে পরিণত করতে চাইবে। যেমনটা কলম্বাস রেডইন্ডিয়ানদের করেছিলেন।

আরপি/এএস 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top