রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

কলড্রপে মিলবে আরও বেশি ক্ষতিপূরণ


প্রকাশিত:
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪২

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ২০:২৯

সংগৃহিত

কলড্রপ নিয়ে বিটিআরসির নতুন নির্দেশনায় গ্রাহক আরও বেশি ক্ষতিপূরণ পাবে। নতুন নির্দেশনায় প্রতিদিন প্রথম ও দ্বিতীয় কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ৩০ সেকেন্ড বা ৩টি পালস (এক পালস ১০ সেকেন্ড) ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দিতে হবে। আর তৃতীয় হতে সপ্তম কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ৪০ সেকেন্ড বা ৪টি পালস পাবে গ্রাহক। এই নির্দেশনা অননেট কলড্রপের জন্য, যা কার্যকর হবে ১ অক্টোবর হতে।

সোমবার বিটিআরসির সম্মেলন কক্ষে কলড্রপ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই নির্দেশনার কথা জানায় বিটিআরসি।

নতুন নির্দেশনায়, কলড্রপ নিয়ে সব মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য অভিন্ন ইউএসএসডি কোড *১২১*৭৬৫# ডায়াল করে একজন গ্রাহক জানতে পারবেন তার আগের দিন, সপ্তাহ বা মাসিক অন-নেট কলড্রপের পরিমাণ কতো।

এরসঙ্গে রয়েছে, কলড্রপের ফলে পাওয়া কল মিনিট পরবর্তী দিনের প্রথম কল হতে ব্যবহারযোগ্য হবে। ফেরত পাওয়া মিনিট পুরোপুরি ব্যবহার শেষ হওয়ার আগে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হতে কোনো টাকা কাটা যাবে না।

এছাড়া কলড্রপের জন্য ফেরত দেয়া টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএমএস করে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ডাক ও টেলিযোযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান। কলড্রপ নিয়ে বিশদ উপস্থাপনা দেন বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, অপারেটররা যদি তাদের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে মনোযোগ দেন, সেবার মান ভালো করেন তাহলে তো ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না।

‘প্রথম ও দ্বিতীয় কলড্রপে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ফলে এখন সব গ্রাহকরাই কলড্রপ হলেই ক্ষতিপূরণ পাবে’ উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

মোবাইল ফোনে কলড্রপ কখনও কাম্য নয় উল্লেখ করে মো: খলিলুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য অপারেটরদের নজর দিতে হবে। ভয়েস কলের উন্নতির পাশপাাশি ডেটার গতির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে বেশকিছু পদেক্ষপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ২০২১ এবং ২০২২ সালে তরঙ্গ নিলাম ও টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইন চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল অপারেটর এবং এনটিটিএন অপারেটদের মধ্যে সাথে দূরত্ব কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিটিএস সাইটের সক্ষমতার তুলনায় কোনো কোনো এলাকায় গ্রাহক বেশি হওয়ায় কলড্রপ বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে সেসব জায়গায় সক্ষমতা বাড়াতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান কমিশন চেয়ারম্যান।

তিনি উল্লেখ করেন, আপাতত অননেট কলড্রপ নির্দেশিকা প্রণয়ন হলেও বিটিআরসিতে স্থাপিত টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম চালু হলে অফনেট কলড্রপের ক্ষেত্রেও নির্দেশনা আসবে ।

সম্মেলনে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্রসহ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদ, মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: এহসানুল কবীর বক্তব্য রাখেন।

বিটিআরসির সচিব মো: নূরুল হাফিজের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কমিশনার (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো: দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডুসহ বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরদের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা।

এতোদিন কোনো অপারেটরই প্রথম কলড্রপের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দিতো না। উল্লেখ করার বিষয় হলো, গ্রাহকের যতো কলড্রপ হতো তার ৬৫ শতাংশই হয় প্রথম কলড্রপ। দেখা যাচ্ছে, এতে কলড্রপের বেশিরভাগ অংশেরই ক্ষতিপূরণ পেতো না গ্রাহক।

আগে গ্রামীণফোন ও রবি ৩য় থেকে ৭ম কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতি কলড্রপে এক মিনিট করে ফেরত দিতো। আর বাংলালিংক এটি দিতো ২য় থেকে ৬ষ্ঠ কলড্রপ পর্যন্ত ।

প্রশ্ন আসতে পারে, গ্রাহক কেনো সপ্তম কলড্রপ পর্যন্তই এই ক্ষতিপূরণ পাবে। এর বেশি, মানে ৮ম, নবম বা দশম পর্যন্ত নয় কেনো ?

বিটিআরসি বলছে, অপারেটরগুলোর যত কলড্রপ হয় তার মোট সংখ্যার ৯৮ শতাংশই প্রথম হতে সপ্তম কলড্রপে হয়ে থাকে।

অফনেট কলড্রপের ক্ষতিপূরণের কী হবে ?

অফনেট কলড্রপের ক্ষতিপূরণও যেন গ্রাহক পেতে পারে সেজন্য কাজ করছে বিটিআরসি।

অফনেট কলড্রপের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, এনটিটিএন ফাইবার কাটায় নেটওয়ার্ক কাটা, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক মানসম্মত না হওয়া, যন্ত্রপাতি অচল হওয়া, আইসিএক্স সুইচ ক্যাপাসিটিসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে অনেকগুলো অংশীজন যুক্ত রয়েছে।

বিটিআরসি বলছে, অফনেট কলড্রপর ক্ষেত্রে প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী যেকোনো অপারেটরের কারিগরী সীমাবদ্ধতার কারণে কলড্রপ হতে পারে। নানা অংশীজন থাকায় অফনেট কলড্রপের মূল কারণ বের করা এখন জটিল।

তবে বিটিআরসি ‘টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম’ বা টিএমএস প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেখানে অফনেট কলড্রপের কারণ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং দায়ী প্রেরক ও গ্রাহক অপারেটরকে দায়বদ্ধতায় আনতে পারবে।

কলড্রপের বর্তমান পরিস্থিতি :

চলতি বছরের মে মাসজুড়ে কলড্রপের পরিসংখ্যান বলছে, ওই ৩১ দিনে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের মোট অননেট কলড্রপ হয়েছে ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩২টি। যেখানে প্রথম কলড্রপ ৫ কোটি ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৭ টি, দ্বিতীয় কলড্রপ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ১৭৮ টি, তৃতীয় ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৬টি, চতুর্থ ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৬টি, ৫ম ১৫ লাখ ৪১ হাজার ১৬০ টি, ৬ষ্ঠ ৯ লাখ ৫০ হাজার ৩১০ টি এবং ৭ম ১০ লাখ ২৬ হাজার।

এর বাইরে ৮ম হতে আরও কলড্রপের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৮৯২ টি।

সূত্র: টেক শহর

আরপি/ এসএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top