রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় দিবস আজ


প্রকাশিত:
১২ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩৩

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৫

ফাইল ছবি

আজ ২০ রমজান। ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় দিবস আজ। মুসলিম বাহিনীর এই বিজয় শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে অনন্য বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার। কারণ, এই দিনে বিনা রক্তপাতে বিশ্বনবী (স.)-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা জয় করে নেন আরবের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরী। প্রতিষ্ঠিত হয় সত্য ধর্ম ইসলাম।

পবিত্র মক্কা বিজয় ছিল বিশ্বনবী (স.)-এর দূরদর্শিতা, শান্তিকামিতা ও ক্ষমাশীলতার অসাধারণ সাক্ষ্য। অষ্টম হিজরির রমজানে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

মূর্তিপূজার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল মক্কা। ইব্রাহীম (আ.) একক প্রভুর ইবাদতের জন্য যে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন, তা ভরে ফেলা হয়েছিল মূর্তি ও বিগ্রহে। ১০ রমজান মদিনা থেকে ১০ হাজার সাহাবি নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওনা হন নবীজি (স.)।

তবে, মক্কা জয়ের জন্য অভিযান পরিচালনার পেছনের উপলক্ষটি হচ্ছে হুদাইবিয়ার সন্ধি। হিজরি ষষ্ঠ বছরে সম্পাদিত এ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছিল মক্কার কুরাইশরা। মহানবী (স.) প্রতিকার চেয়েছিলেন, নইলে সন্ধি শেষ—এমনটা মনে করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কুরাইশরা কোনো সাড়া না দেওয়ায় তিনি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।

মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের প্রস্তুতি ছিল অত্যন্ত গোপন। বিশ্বনবী (স.) মুসলিম সেনা নিয়ে উপস্থিত হন। মক্কার কাফের নেতারা এমন অভিযানের ব্যাপারে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

তারা বিশাল এই বাহিনীর আগমনে হতভম্ব হয়ে যায় এবং কোনো ধরনের প্রতিরোধের চিন্তা তো নয়ই, বরং পুরোপুরি হতাশ হয়ে কেবল প্রাণ রক্ষার কথা ভাবতে থাকে!

মহানবী (স.) মক্কায় প্রবেশ করেন ২০ রমজান। রক্তপাতহীন অভিযানেই ইসলামের পতাকা সেখানে সমুন্নত হয়। সেসময় কাবার ভেতরে৩৬০টি মূর্তি ছিল। ধনুকের মাধ্যমে এক এক করে তিনি মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেললেন। এ সময় তিনি কোরআনের এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন- ‘বলুন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮)

আর এতদিন যারা ইসলামের শত্রুতায় প্রস্তুত ছিল, তাদের জন্য ঘোষণা করেন সাধারণ ক্ষমা। তিনি বললেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা সবাই মুক্ত।’ শুধু তা-ই নয়, কাফের নেতা আবু সুফিয়ানের ঘরে যে ব্যক্তি আশ্রয় নেবে, তাকেও তিনি ক্ষমা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে, সে নিরাপদ থাকবে।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ. ৪০৫, ৪০১)

নবীজির (স.) এই অপূর্ব করুণা দেখে ভীতসন্ত্রস্ত মক্কাবাসী অভিভূত হয়ে পড়ে। সজল নয়নে নির্বাক তাকিয়ে থাকে মহামানবের মুখের দিকে।

তিনি মক্কাবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মৈত্রী ও একতার কথা বললেন: ‘হে কুরাইশরা! অতীতের সব ভ্রান্ত ধারণা মন থেকে মুছে ফেলো, কৌলীন্যের গর্ব ভুলে যাও, সবাই এক হও। সব মানুষ সমান, এ কথা বিশ্বাস করো। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই বেশি সম্মানিত, যে বেশি মুত্তাকি।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)

শান্তি ও মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করলেন বিশ্বনবী (স.)। তাই মক্কা বিজয়ের ঘটনা বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। আর সেকারণেই ২০ রমজান মুসলমানদের জন্য বিপুল গৌরবের স্মারক।

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top