রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


রোজা রেখে নাটক-সিনেমা দেখার বিধান কি?


প্রকাশিত:
২৭ মার্চ ২০২৩ ২২:১৯

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৬:১৪

প্রতীকী ছবি

পবিত্র রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া (পরহেজগারি) অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)

রমজানের উদ্দেশ্য হলো—তাকওয়া-পরহেজগারি বা আল্লাহভীতি ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। এক কথায় মানুষ যেন মুত্তাকি হতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। মুত্তাকিরা আল্লাহর পছন্দের বান্দা। তিনি তাকওয়া অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে মুত্তাকি বান্দারা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় এবং ভালোবাসার পাত্র।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)

তাকওয়া এমন গুণ যার মাধ্যমে একজন বান্দা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই সবচেয়ে সম্মানী যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুত্তাকি।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)

সুতরাং পবিত্র রমজানের মর্যাদা রক্ষায় রোজা রেখে নাটক-সিনেমা, নাচ-গান থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। যদিও এগুলো রোজা ভঙ্গের কারণ নয়; তবুও লক্ষ রাখতে হবে, হারাম কিছু থেকে যেন চোখ মুক্ত থাকে। ইচ্ছা করে হারাম কিছু দেখলে কঠিন গুনাহ হবে এবং রোজার সওয়াব নষ্ট হবে। আবার শুধু অশ্লীলতার মধ্যে ডুবে থাকলে সেই রোজার কোনো কল্যাণ নেই বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা ত্রুটিযুক্ত করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি: ২২৩৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি: ১৮০৪)

অপর হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা পালনের সার হলো তৃষ্ণার্ত আর ক্ষুধার্ত থাকা।’ (সুনানে তিবরানি: ৫৬৩৬)

তবে নাটক-সিনেমা বলতেই হারাম নয়। সাধারণত টিভি, নাটক-সিনেমার হুকুম হলো— জায়েজ বিষয় দেখা যাবে। অর্থাৎ যা খোলা চোখে দেখা জায়েজ, তা যেকোনো মাধ্যমে (টিভি, ইন্টারনেটে) দেখাও জায়েজ; আর যা সরাসরি দেখা হারাম, তা যেকোনো উপায়ে দেখাও হারাম।

বর্তমান যুগে যেহেতু ফেতনাবিহীন নাটক-সিনেমা তৈরি হয় না, তাই সবরকম নাটক-সিনেমা থেকেই দূরে থাকতে বলেন আলেমরা।

রমজান এমন এক মাস, যে মাসে বান্দার জন্য রয়েছে নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার অনেক সুযোগ। যেমন-

-যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি: ১/২২; মুসলিম: ১/৫২৩)

-তারাবি নামাজের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায় কিছু গুনাহ। নবীজি (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খাটি ইমান ও ইখলাসের সঙ্গে রমজানের রাতে (তারাবিতে) দাঁড়িয়ে যাবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি: ১/২২; মুসলিম: ১/৫২৩)

-লাইলাতুল কদরে গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াব লাভের খাঁটি আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল্লাইলে (তাহাজ্জুদে) অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি: ২/৬৭২; মুসলিম: ১/৫২৩)

সুতরাং মাগফেরাতের এই মাসে টিভি-সিনেমার পেছনে সময় নষ্ট না করে সওয়াবের কাজগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। বিশেষ করে কোরআন তেলাওয়াত ও চর্চা রমজানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কেননা পবিত্র রমজান কোরআন নাজিলের মাস। তাছাড়া রমজানকে বলা হয় সহানুভূতির মাস। তাই অসহায়-দরিদ্রদের দান-সদকা রমজানে সওয়াব লাভের অনন্য মাধ্যম। এছাড়া আমলনামায় বেশি বেশি সওয়াব যোগ হবে দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকারের মাধ্যমে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানে নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সবরকম গুনাহের কাজ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

আরপি/এসআর-১০



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top