রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


অনেক দেরি হয়ে গেছে, ফিরে এসো!


প্রকাশিত:
২৮ আগস্ট ২০২১ ১৯:০৪

আপডেট:
২৮ আগস্ট ২০২১ ১৯:২৪

নিজের পরিচয় জানে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব কিছু পরিচয় আছে । আছে নিজের তৈরি আলাদা জগত। এ জগতে আছে তার পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন। আছে কিছু নিয়ম-নীতি। আছে কিছু বিধি-বিধান। আছে কিছু দুনিয়াবী সাজ-সরঞ্জাম। কেউ যদি সে জগতের বাসিন্দা বা সদস্য হতে চাই তাহলে সে নিয়ম-নীতিগুলো বিধি-বিধানগুলো মেনে চলতে হবে। মেনে চলতে হবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব কর্তব্য। সে যদি সে শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। তার দায়িত্ব পাইটু-পাই সম্পন্ন করে। তাহলে সে হয়ে উঠবে সে রাজ্যের আদর্শ ও যোগ্য সদস্য। হয়ে উঠবে সাবার ভালোবাসার মানুষ। পক্ষান্তরে পালন না করলে সে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। সে তার অর্পিত দায়িত্ব¡ সম্পর্কে বে-খবর থাকলে তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে। তার কপালে সুধু জুটবে ধিক্কার। আমরা আমাদের আসল পরিচয় সম্পর্কে বেখর বা বেখেয়াল। উদাসীন।

চলুন তাহলে একটু বাস্তবতা থেকে ঘুরে আসি.........

একদিন এক বন্ধুর সঙ্গে সাঙ্গ দিতে গিয়ে তার সাথে এক দোকানে গেলাম ভোজনকার্য সম্পন্ন করার জন্য। তখন দোকানে প্রবেশ করতেই চোখ পড়ল এক রোগা, পাতলা, কালো কুচকুচে যুবকের মুখের উপর। আমাকে দেখতে এরকম কালো লাগলেও তার মুখের যে মুক্তা ঝরা হাসি, আমাকে দেখে দিল তাতে আমার ধারণা ভুল হিসেবে পরিগণিত হলো।
তখন একটি উক্তি মনে পড়লো "প্রচ্ছদ দেখে একটি বইয়ের মূল্যায়ন করাটা স্রেফ বোকামু"
আমার তখন আগ্রহ বেড়ে গেল আমাকে দেখে হাসি দেওয়ার কারণটা আসলে কি?
তখন তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি ?
সে আগের হাসিটা দিলো।
তোমার বাড়ি কি আশেপাশে?
এবার সে কথা শোনা মাত্রই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

আমি ভাবলাম এর মনে হয় কোন সমস্যা আছে। সেটা যাচাই করার জন্য আমার হাতে থাকা চকলেটটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম, নাও এটা! সে না নিয়ে আবারও পূর্বের ন্যায় হাসি দিলো।
না, এর সাথে পাগলামু করে আমার লাভ নেই।
পাশের দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম এই ছেলেটাকে চিনেন ? পাগল না কি ?
তখন দোকানদার বলল না!
তাহলে?

ছেলেটা আসলে বোবা কথা বলতে পারেনা। তার বাড়ি কোথায় তাও সে জানে না। এখানে মেম্বারের বাড়িতে থাকে , তার বাড়ির সব কাজ করে দেয় এবং জমি জায়গা দেখাশোনা করে।
আমি বললাম ও আচ্ছা আচ্ছা এই ব্যাপার।
তবে ছেলেটার একটা বৈশিষ্ট্য আছে, কেউ কোন জিনিস দিলেন নেয় না এবং তার মনিবের কোন জিনিস অন্য কাউকে দেয় না। অর্থাৎ ছেলেটা তার মনিবের কোন কথার খেলাপ করে না। যা বলে তাই করে।আমার কথাগুলো শুনে মনে হল এরকম মানুষ পাওয়া দুনিয়াতে খুবই দুষ্কর।

কর্পোরেট দুনিয়ায় মানুষ তর-তর করে বড় হওয়ার জন্য নানা রকম অন্যায় অবিচার করছে। সব কিছুর কাছে মাথানত করছে। আমরা অসম্ভব রকম বড় হওয়ার যেন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছি। আকাশচুম্বী জয় ও খ্যাতির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি। এর জন্য আমাদের যে কোনো অন্যায়ই করা লাগুক না কেন করছি। এটা মানুষকে নৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। দিন দিন এই রোগীর সংখ্যা যেন বাড়েই চলেছে। আর এই মানসিক অসুস্থতার একমাত্র চিকিৎসা অল্পে তুষ্ট থাকা, অল্পেই মঙ্গল ভাবা। যা অনেকে মানতে নারাজ। 

ঠিক সেই গল্পের মতো, আমরা ভুলে গেছি আমার পরিচয়।
আমাকে এই দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে কেন?
আমার গন্তব্যই বা কোথায়?
এরকম অনেক প্রশ্ন জাগে মনের উঠানে। চলুন ‘কুরআন’ এ সম্পর্কে কি বলেছেন-
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত ও গোলামী করার জন্য।”
                                                                                সূরা যারিয়াত-৫৬

তিনি আরো বলেন-
“হে ঈমানদার মানুষ তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত করো যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা আত্মরক্ষা করতে।”
                                                                                সূরা বাকারা-২১
আল্লাহ আমদের পাঠিয়েছেন তার গোলামি কারার ও মানুষকে সৎ কাজের জন্য আদেশ করার জন্য
“আমি পৃথিবীতে খলিফা প্রেরণ করেছি ।”
                                              সূরা বাকারা-৩০
এখানে খলিফা বা প্রতিনিধি বলতে বোঝায়, কোন একজন প্রশাসক বা ক্ষমতাশীল ব্যক্তি কাউকে বিশেষ অন্য কোন জায়গায় তার পক্ষে কোন কাজকর্ম সম্পাদন করার উদ্দেশ্য যখন কাউকে পাঠায়, তখন সেই ব্যাক্তি হয় উক্ত ক্ষমতাশীল প্রশাসকের প্রতিনিধি। যেমন একজন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা তার জেলা প্রশাসকের অধীনে উপজেলায় একজন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এখন এই প্রতিনিধি কোনক্রমেই জেলা প্রশাসক কর্তৃক অর্পিত বিধি-নিষেধ বহির্ভূত নিজের ইচ্ছায় কোন কাজ করতে পারবেন কি?
আপনারা বলবেন, নিশ্চয় না। কারণ তা করলে তিনি আইনত দণ্ডনীয় হতে বাধ্য। তেমনি ভাবে আল্লাহ‘তালা মানুষকে খলিফা করে পাঠিয়েছেন, আল্লাহ‘তালার গোলামী করার মাধ্যমে তার ইবাদাত করার জন্য। তার দেওয়া বিধিবিধান গুলো মানুষ তার জীবনে বাস্তবায়ন করবে এবং অন্য জন তথা বন্ধু-বান্ধবকেও পালনের জন্য উৎসাহিত করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
“তিনিই তোমাদের দুনিয়ার প্রতিনিধি করেছেন এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন সে সম্বন্ধেপরিষ্কার উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন”
                                                                            সূরা আনআম -১৬৫
এই আয়াতগুলো থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, আমরা সবাই পরীক্ষার্থী আর দুনিয়াটা হল বড় পরীক্ষা ক্ষেত্র । এখানে যে যেরকম ভাবে পরীক্ষা দিবে সে ঠিক তেমনি ফলাফল করবে। অর্থাৎ কেউ যদি ভাল কাজ করে নেক আমল করে তার সে প্রতিদান পাবে এবং কেউ যদি বাদ আমল করে বা খারাপ কাজ করে তাহলেও সে তার প্রতিদান পাবে।
 আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
“কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তাও সে বিচার দিবসে দেখতে পাবে, আবার কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখতে পাবে।”
                                                    সূরা যিলযাল ৭-৮
বোঝাই যাচ্ছে, যে কোন কাজ করতে হলে চিন্তা ভাবনা করে করতে হবে। কারণ এখানে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই। আমরা একটা সীমার মধ্যে আবদ্ধ। আমরা চাইলেও যে কোন কাজ করতে পারিনা।
তাইতো কথায় আছে “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না”

এবার আসা যাক আমাদের গন্তব্য কোথায় এ সম্পর্কে ‘কুরআন ’ কি বলে?

কর্পোরেট দুনিয়ার খেল-তামাশা যখন সাঙ্গ হবে। যখন আমাদের দেহ থেকে প্রাণ বায়ু বের হয়ে যাবে। তখন ফিরে যেতে হবে আপনাকে আপনার রবের তরে। জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। সকল কাজ কর্মের হিসেব আপনাকে দিতে হবে।
“পাঠ কর তোমার কিতাব, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথষ্টে।”
                                                                              সূরা বনী ইসরাঈল ১৪
যারা আমল নামা ডান হাতে পাবে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত নাজ নিয়ামত। 
তাইতো আল্লাহ বলেনঃ
“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।”
                                                  সূরা বুরুজ-১১
আসলেইতো তাই যারা সৎকর্ম করবে। যারা মিথ্যা বলে না। যারা আল্লাহর অবাধ্য হয়না। অসৎ পথে পা বাড়ায় না। যারা সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন পালন করে। তারাইতো আসলে প্রকৃত ঈমানদার। তারাইতো আসলে সৎকর্মশীল ব্যক্তি। তারাইতো আসলে মুত্তকী। তারাইতো এই পুরষ্কারের একমাত্র যোগ্য উত্তরসরী।
আল্লাহ তাদের বলেন-
“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে। যার পরিধি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।”
                                                                                  সূরা ইমরান-১৩৩
আল্লাহ এই সকল মুত্তকীদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
“কোন মানুষ জানেনা আমি তাদের আমলের বিনিময় তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কি বস্তু লুকায়িত রেখেছি।”
              সূরা সাজদা ১৪
আমাদের আল্লাহ-ই একমাত্র দয়ালু, একমাত্র স্নেহশীল, একমাত্র দাতা, একমাত্র অনুগ্রহশীল। যেখানে সবাই নির্দয়, সেখানে তিনিই সদয়। যখন সবাই নিষ্ঠুর, তখন তিনিই পরম মমতাশীল। সুতরাং তার নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আশ্রয় গ্রহণ করো। তার মমতার আচঁলে নিজেকে সোর্পদ ও জড়িয়ে রাখ। তিনিই শুরু, তিনিই সর্বশেষ। তিনিই আমাদের পৌঁছে দিবেন জান্নতুল ফিরদৌসে। আর সেখানে থাকবে..
“পরহেযগারদের জন্য রয়েছে সাফল্য। রয়েছে উদ্যান ও আঙ্গুর। সমবয়ষ্কা যৌবনা তরুণী।”
                                                                                   সূরা  নাবা ৩১-৩৩
এখই আমাদের সময় আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ককে আরো গভীর, আরো গাড়, আরো নিবিড়, আরো দৃঢ় ও সুদৃঢ় করা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top