রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

জনবল সঙ্কটে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতর


প্রকাশিত:
১৯ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩১

আপডেট:
১৯ নভেম্বর ২০২০ ২২:২৪

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের জনবল সঙ্কট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা কোন সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা, কৃত্রিম প্রজনন, টিকাদান ও গরু মোটা তাজাকরণ কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

প্রাণিসম্পদ দফতরের সহযোগিতা ছাড়াই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার গরু মোটাতাজাকরণ ও পোল্ট্রি খামার। সরকারি পশু ডাক্তারের সহযোগিতা না পাওয়ায় বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শে চলছে এসব খামার। ফলে বাড়তি অর্থ ও ভূল পরামর্শে ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। লাগামহীন চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে রেজিষ্টারবিহীন ভুয়া ডাক্তার।

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ১১৮ টি পদের মধ্যে ৪০ টি শূন্য। ফলে প্রকট হয়ে উঠেছে জনবল সঙ্কট। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় ভুয়া ডাক্তার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারি ডাক্তার নিয়োগ হলে অবৈধ-ভুয়া ডাক্তার নামধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সকল কাঠামো না থাকায় ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। উপজেলায় মিনি ল্যাব প্রয়োজন থাকলেও জেলা-উপজেলা মিলিয়ে গবাদিপ্রাণির পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি মাইক্রোস্কোপ ছাড়া কিছু নাই।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় হাঁস, মুরগি, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, গাভীসহ গবাদিপ্রাণি ও পোল্ট্রির মোট ১৪ হাজার ২২০ টি খামার রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার। যার পরিমাণ ১০ হাজার ৩৫৪ টি। এছাড়াও গাভীর খামার ৩৩৯টি, ছাগলের ২৬২টি, ভেড়ার ১৯৬টি, লেয়ার মুরগি ৪৪৪ টি, ব্রয়লার ৮৫৭ টি অপরদিকে, মহিষের ১১৯টি, সোনালী মুরগির ৫১টি, কবুতরের ১২২২টি, টার্কি ১৯৪, কোয়েলের ৪২টি এবং হ্যাচারি বা ব্রিডার ৮টি খামার রয়েছে।

জেলায় হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের ১০ হাজার ৪৭৩টি খামারে দেশি গরু রয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২১৬ টি এবং শংকর জাতের ১ লাখ ২১ হাজার ৪২১ টি গরু রয়েছে। মহিষ রয়েছে ১১ হাজার ৩৪২ টি। এছাড়া ২৬২টি খামারে ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪৮টি ছাগল এবং ১৯৬টি খামারে ৮৫ হাজার ৭৯৪টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলায় ১২৭টি হাঁসের খামারে রয়েছে আট লাখ ২৪ হাজার ৭১৫টি হাঁস। মুরগি আছে ৮৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭৯টি। ১২২২টি খামারে আছে তিন লাখ ৭৬৬টি কবুতর।


এসব গবাদি পশুপাখির রোগ নিরাময়, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরামর্শের জন্যে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদগুলো শূন্য থাকায় জেলার খামারগুলোয় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। খামারিরা দুধ, গোশত ও ডিম উপাদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। পাচ্ছেন না সুলভমূল্যে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসা করাচ্ছেন বাইরের ভুয়া নামধারী পশু ডাক্তার দিয়ে।

শূন্য পদগুলোর মধ্যে তানোর উপজেলায় ৬টি পদ শূন্য, বাগমারা উপজেলায় ৭টি, গোদাগাড়ী উপজেলায় সৃষ্ট ২টি, পবা উপজেলায় ৪টি, মোহনপুর উপজেলায় ৪টি, দূর্গাপুর উপজেলায় ৪টি, চারঘাট উপজেলায় ৫টি, পুঠিয়া উপজেলায় ৪টি পদ শূন্য। এমনকি খোদ জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরেও রয়েছে জনবল সঙ্কট।

বিভিন্ন খামারী বেশির ভাগই পশু-পাখির নিয়মিত টিকাদান, চিকিৎসাসেবা, কৃত্রিম প্রজনন ও গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর নগরীর এক গো-খামারী বলেন, ‘আমার খামারে মোট ৭৩ টি গরু রয়েছে। অসুস্থ হলে লাখ টাকার গরুকে তো আর ফেলে রাখে যায় না। তাই নিজে নিজে চিকিৎসা করাই। প্রাণিসম্পদে তথ্যের জন্য ফোন দিলে বিভিন্ন তথ্য, চিকিৎসা বলে দেয়। সরাসরি খামারে তাঁরা আসে না। যা করার আমি নিজেই করি।’

অধিকাংশ সময়ই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় খামার মালিকদের। প্রায় সময়ই গরুর বিভিন্ন রোগবালাইসহ নানা সমস্যা হলেও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ডাক্তার পাওয়া যায় না বলে অভিযোগও রয়েছে প্রতিনিয়িত। হাতের কাছে যাদের পাওয়া যায় তাদেরকে দিয়েই চিকিৎসা করান বলে জানান অপর এক খামারি।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের জনবল সঙ্কট ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসাসেবা সেভাবে করতে পারছেন না বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহা. ইসমাইল হক। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে জনবল সঙ্কটের বিষয়টি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে সঙ্কট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অশ্বাস দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর শূন্য পদগুলোয় পদায়নের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে।

এই কর্মকর্তা আরোও বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় শূন্য পদগুলোয় পদায়ন হলে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। অনেকেই উচ্চ পদে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ায় এই সেক্টরে একটা গ্যাপ পড়েছে। ফলে জনবল কমে যাওয়ায় অল্প কর্মকর্তা-কর্মচারীর আগের তুলনায় খামরিদের কাছে গিয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসা দিতে পারছে না। প্রাণীস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধের বিক্রয় ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে মানুষকে সচেতন এবং জেলার সর্বত্র কঠোরভাবে প্রশাসনও মনিটরিং করছে।

জেলায় স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক এবং রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।সরকারি ঔষুধ অন্য কোথাও বিক্রি হওয়ার বিষয়ে প্রমাণ হলে বা জানতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top