রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে বিশ্বকাপ ট্রফির আদলে দুর্গাপূজার মণ্ডপ!


প্রকাশিত:
২ অক্টোবর ২০২২ ০৩:২৬

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩৮

ছবি: বিশ্বকাপ ট্রফির আদলে দুর্গাপূজার মণ্ডপ!

আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজও প্রায় শেষ। রং-তুলির আঁচড়ে শেষ মুহূর্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা। মণ্ডপগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন আয়োজকরা।

মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ মণ্ডপেই তুলির আঁচড়ে শেষ কাজটুকু করতে ব্যস্ত শিল্পীরা। আবার অনেকেই চুল লাগিয়ে দিচ্ছেন দেবী দুর্গার মাথায়। আলোকসজ্জা, স্টেজ কিংবা গেট সাজানোর কাজে ব্যস্ত ডেকোরেশনের লোকেরা। সব মিলিয়ে দম ফেলার ফুরসুত নেই আয়োজকদের।

এদিকে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পূজার আয়োজন করে আসছে রাজশাহী নগরীর টাইগার সংঘ নামের একটি সংগঠন। তাদের মণ্ডপ তৈরি নিয়ে নগরবাসীর মাঝে থাকে বাড়তি আগ্রহ। প্রতি বছর ব্যতিক্রমী কোনো আয়োজন নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সর্ব মহলে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও ভিন্ন আয়োজন নিয়ে এসেছেন তারা।

নগরীর রাণীবাজার মোড়ে টাইগার সংঘের মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, এবারের পূজার আসরে ফুটবল বিশ্বকাপ ট্রফির আদলে মণ্ডপ তৈরি করছেন তারা। আসন্ন কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে তাদের এই আয়োজন। মণ্ডপের উপরের অংশে থাকছে ২৬ ফুটের একটি বিশ্বকাপ ট্রফির আদল। দুই পাশ দিয়ে থাকছে অংশগ্রহণকারী ৩২ দলের জাতীয় পিতাকা। আর একবারে উপরে থাকছে বাংলাদেশের পতাকা।
জানা যায়, গত বছর চলমান করোনা প্রতিরোধে সচেতনতার অংশ হিসেবে করোনা ও মাস্ক নিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছিল টাইগার সংঘ। তার আগে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুকে স্মরণে রুপালি গিটারে সাজানো হয়েছিল মণ্ডপ। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বাহুবলী, ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখের অবয়ব দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করে প্রশংসায় ভাসে টাইগার সংঘ। এ বছর ৪০তম পূজার আয়োজন করছে সংগঠনটি।

এ বিষয়ে জানতে টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল চৌধুরী বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই টাইগার সংঘ শারদীয় দুর্গোৎসবে নতুন আর ব্যতিক্রমী সাজে মণ্ডপ সাজানোর চেষ্টা করে। রাজশাহীবাসীও টাইগার সংঘের কাছে নতুন নতুন থিম আশা করে থাকে। টাইগার সংঘের পূজা কি হবে, কখন প্যান্ডেল হবে, কি হচ্ছে থিম, এই নিয়ে নগরবাসীর মাঝে সর্বদাই একটা গুঞ্জন থাকে।'

‘আমরা চিন্তা করেছি, বাংলাদেশ ক্রিকেটে এগিয়ে থাকলেও একসময় ফুটবলে অনেক এগিয়েছিল। ফুটবলে যেন আবারও জনজোয়ার আসে, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও আজকে ফুটবল জগতে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছে। সম্প্রতি সাফ গেমসে মহিলারা বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশকে ফুটবলের মাঠে নতুন সূচনা করেছে। এছাড়াও আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনার কথা মাথায় রেখে এই থিম করা হয়েছে।'


তিনি আরও বলেন, মণ্ডপের মাথার উপরে আছে ২৬ ফিট বাই ১১ ফিট গোল্ডকাপ। পেছনের দৃশ্যটা হচ্ছে ফুটবল মাঠ ও গ্যালারি। দুই পাশে অংশগ্রহণলারী ৩২ দেশের পতাকা রয়েছে। নিচে ১২ জন প্লেয়ারের বন্ধন দিয়ে একটা ফুটবল ডিসপ্লে করা হবে।

পাশাপাশি কাতার বিশ্বকাপের লোগো, মাসকাট প্রদর্শন করা হবে। প্যান্ডেলের রঙও নির্ধারণ করা হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল চারটি রঙে। আমরা যাই স্থাপন বা প্রতিস্থাপন করি না কেন সম্পূর্ণটাই কাতার বিশ্বকাপের আঙ্গিকে হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ভেতরে দুর্গা মাতার যে মূর্তিটা হবে সেই মূর্তিটাও এবার আলাদা একটা থিমে হবে। তার থিমটা হবে দানব বিনাশিনী, কালারও হবে ব্যতিক্রমী। শিব যেমন বিষ পান করে গঙ্গার জলধারাকে পবিত্র করেছিল, ঠিক সেই কালারেই দুর্গাকে নিয়ে এসেছি। যেন যতো দানবীয় শক্তি সব শক্তিকে তার শরীরে ধারণ করে পৃথিবীকে বিষমুক্ত করবে।


টাইগার সংঘ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত ১৯৮২ সালে রাণীবাজারের এখানেই টাইগার সংঘের জন্ম হয়। জায়গা সংকটের কারণে কিছুদিন আমরা অন্যত্র গিয়ে পূজা করেছিলাম। পরে আবার ফিরে এসেছি। টাইগার সংঘ ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মানুষের থেকে চাঁদা তুলে পূজার উৎসব করতো। তারপর থেকে অদ্যবদি সংঘের যারা সদস্য আছে তারা নিজেদের চাঁদা দিয়ে পূজা করি।

ডেকোরেশনের কাজ করা নন্দ রায় জানান, ছাত্রজীবনে বিএ পাস করে এই নাম লিখিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে পূজার মঞ্চ তৈরি থেকে শুরু করে যাবতীয় ডেকোরেশন কাজ করেন। এর মধ্যে প্রতিবছরই টাইগার সংঘে নিত্যনতুন থিমে কাজ করতে পেরে অনেক ভালো লাগে।

পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পর্কে রাজশাহী মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, পুরো নগরীতে এবার ৭৬টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মণ্ডপগুলোতে সাজ সাজ একটা রব বিরাজ করছে। আমরা এবার খুবই আড়ম্বরপূর্ণভাবে ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত করছি।

তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে সেইভাবে উৎসব করতে পারি নি, সেই দুই বছরের যে উৎসবের ঘাটতি এবার সেটা পূরণ করে নিচ্ছি। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই আমাদের সাথে আছে। আমরা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সার্বজনীন এই উৎসবকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখতে চাই। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন আছে সেটাকে সবার উর্ধ্বে তুলে ধরতে চাই।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আমরা দেখেছি পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান করছে। প্রতিটি মণ্ডপে আগে থেকেই তাদের নিরাপত্তা বলয় জোরদার করেছে। সার্বিকভাবে প্রতিবারের চেয়ে এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জোড়ালো। আমরা ইতোমধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মহোদয়ের সাথে মিটিং করেছি। উনি আমাদের অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেগুলো পালন করছি।


তিনি আরও বলেন, নগরীর পূজা মণ্ডপে মেয়র মহোদয়ের পক্ষ থেকে যে ১০ হাজার টাকার অনুদান ছিল এবার তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে অনুদান হিসেবে ৫০০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।

জনপ্রতিনিধিসহ সব দলের লোকজন শারদীয় দুর্গোৎসবের খোঁজ-খবর রাখছেন। সবাইকে নিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব খুবই সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে উদযাপন করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পূজায় নিরাপত্তা প্রস্তুতি জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম  বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে নগরীতে আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক ভালো রয়েছে। ইতোমধ্যে পূজামণ্ডপে সিসিটিভি স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজাকে ঘিরে নিয়মিত পুলিশ টহলের বাহিরেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আরএমপি এলাকায় মোট ৯৬টি মণ্ডপে পূজা আয়োজন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। পূজাকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলেও জানান আরএমপি মুখপাত্র।

আরপি / এসএডি-2



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top