রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

লাঠিতে ভর দিয়েই ভোটকেন্দ্রে শতবর্ষী রহিম!


প্রকাশিত:
২৯ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৮

আপডেট:
২৯ নভেম্বর ২০২১ ২১:২৯

ছবি: ভোটকেন্দ্রে শতবর্ষী রহিম

রহিম উদ্দীন। বয়স ১০১ বছর। শরীরে জড়সড় চামড়ায় চলাফেরা করছেন লাঠি হাতে। তবুও ভোটবিমুখ হননি। লাঠিতে ভর দিয়েই ছুটে এসেছেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। রবিবার (২৮ নভেম্বর) তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যয় রাজশাহীর মোহনপুরের মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন তিনি। ভোট দিয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে। নির্বাচনে বিজয়ীও হয়েছেন ওই প্রার্থী। ফলে বেজায় খুশি রহিম।

জানা গেছে, রবিবার মোহনপুরের ৬ ইউনিয়নের মোট ৫৮টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে ১৬টি কেন্দ্র ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। আর নির্বাচন অফিস অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করে আরো ১৬টিকে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করেন কর্মকর্তারা। তবে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নেই নিরঙ্কুশ জয় পান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। যারমধ্যে মৌগাছি ইউনিয়নে আল আমিন বিশ্বাস, ধুরইলে দেলোয়ার হোসেন, রায়ঘাটি ইউনিয়নে বাবুল হোসেন, ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নে আজহারুল ইসলাম, বাকশিমইলে আব্দুল মান্নান ও জাহানাবাদ ইউনিয়নে হযরত আলী বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন।

এদিকে জেলার পবা উপজেলার ৭ ইউনিয়নেও একইদিনে ভোটগ্রহন হয়। তবে পবার তিনটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জয়ী হতে পারেন নি। উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নে শাহাদত হোসাইন সাগর, হুজুরীপাড়া ইউনিয়নে গোলাম মোস্তফা, দামকুড়ায় রফিকুল ইসলাম নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হন। আর হরিপুর ইউনিয়নে কোনো বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল।

এছাড়া পারিলা ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতিক নিয়ে সাঈদ আলী মোরশেদ এবং দর্শনপাড়া ইউনিয়নে আনারস প্রতিক নিয়ে শাহাদত হোসেন সাব্বির জয় পেয়েছেন। তারা দু‘জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। তবে একমাত্র হড়গ্রাম ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ অটোরিকশা প্রতিকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিন উপজেলায় অসুস্থ, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন মৌগাছি গ্রামের শতবর্ষী রহিম উদ্দিন। এসময় কথা তার সঙ্গে।

ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে রহিম উদ্দিন রাজশাহী পোস্টকে জানান, ১৮ বছর বয়স থেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আসছেন তিনি। ভোটের মাঠে প্রতিবারই কাজ করেছেন নৌকার পক্ষে। বয়সের ভারে এবার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে না পারলেও নিজের ভোটটি দিতে কেন্দ্রে গিয়েছেন প্রথম প্রহরেই। ভোটও দিয়েছেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে। শৈশবকাল থেকেই ধারণ করে আসছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। যে কারণে এবারও ভুল করেননি আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে।

কেন্দ্রটিতে দায়িত্বরত রহিম উদ্দীনের ভাতিজা ও মৌগাছি কলেজের শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, স্থানীয় বাজারে চাচার মুদি দোকান থেকে উপার্জিত টাকায় সংসার চলত। তার এক ছেলে এবং দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। দোকানটি এখন চালাচ্ছেন তার নাতি। তবে এখনও নিজেই চলাফেরা করতে পারেন তিনি। ফলে আসেন ভোট দিতে। কারো সহযোগিতা ছাড়াই নিজেই ভোট দিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়েছেন।

মৌগাছি উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বোরহান উদ্দিন রাজশাহী পোস্টকে বলেন, এ কেন্দ্রে মোট ২২৫০ জন ভোটার ছিলেন। তারমধ্য একমাত্র রহিম উদ্দিনই শতবর্ষী ভোটার। তিনি নিজেই ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন এটা সত্যিই ইতিবাচক। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

জানতে চাইলে নবনির্বাচিত মৌগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন বিশ্বাস রাজশাহী পোস্টকে বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই রহিম উদ্দিনকে আওয়ামীলীগ করতে দেখেছি। গতবার আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তার জন্য বয়ষ্ক ভাতার ব্যবস্থা করেছিলাম। এবার নির্বাচিত হয়েছি। তার পরিবারের দিকে খেয়াল রাখা হবে।

 

 

আরপি/এসআর-০৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top