রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু


প্রকাশিত:
১২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫৩

আপডেট:
১২ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪৩

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

নীল-সাদা আকাশ, ভোরের আবছা কুয়াশা, শ্বেতশুভ্র কাশফুলের দোলা, বাতাসে শিউলী ফুলের ঘ্রাণ। প্রকৃতির এ শোভনীয় রূপের মোহনীয় সজ্জাই জানান দিচ্ছে শরতের উপস্থিতি। সাথে করে নিয়ে এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টের পালন করতে বছর ঘুরে আবারো দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবী দুর্গা এসেছেন ধরাধামে। মহামায়া অসুর বধ করে শান্তির জগত প্রতিষ্ঠায় ধরাধামে নেমে এসেছেন দেবী। পুরোহিতের মন্ত্র পাঠ, ঢাক, ঢোল, কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে পূজিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা।

মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর মন্ডপগুলোতে চলছে দুর্গোৎসবের আরাধনা। পূজাকে ঘিরে রাজশাহী নগরীতেও দেবী দুর্গাকে রংয়ের আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নানা রং ঢংয়ে। আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজ দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে প্রতিটি মণ্ডপ। প্রতিমা দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ভীড় করছেন দর্শনার্থীরা। এ বছর নগরীর ৭৫টি মণ্ডপে আয়োজন করা হচ্ছে দুর্গোৎসবের। প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনার কারণে এবারও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনেই উদযাপিত হচ্ছে দুর্গাপূজা।

হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারিত করে মর্ত্যলোকে সারা বছর কেমন যাবে। সপ্তমীতে ঘটে দেবী দুর্গার আগমন। আর গমন হয় দশমীতে। এই দুই দিন সপ্তাহের কোন দিনে পড়ছে, তার উপরই নির্ভর করে দেবীর আগমন বা গমনের চিত্র। শাস্ত্র মতে সপ্তমী রোব বা সোমবার হলে দেবীর বাহন গজ। সপ্তমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবীর বাহন ঘোটক। সপ্তমী বৃহস্পতি বা শুক্রবার হলে দেবীর বাহন দোলা বা পালকি। সপ্তমী বুধবার হলে দেবীর বাহন নৌকা। আর দশমী যে বারে পড়বে সেই অনুযায়ী স্থির হবে দেবীর প্রস্থানের বাহন। তাই জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে (পৃথিবীতে) আগমন ঘোটকে (ঘোড়া)। আর সপরিবারে কৈলাশে ফিরবেন দোলায় (পালকি) চড়ে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, সোমবার সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী নগরীতেও পূজামণ্ডপগুলোতে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহাষষ্ঠীতে সকালে দুর্গার ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ এবং ষষ্ঠীবিহিত পূজা, সন্ধ্যায় দেবীর বোধন সম্পন্ন হয়েছে। দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্যই আয়োজন করা হয় বন্দনা পূজার। মন্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার মহাসপ্তমীবিহিত পূজা, বুধবার মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বৃহস্পতিবার মহানবমীবিহিত পূজা এবং শুক্রবার দশমীবিহিত পূজা সমাপন এবং প্রতিমা বিসর্জন।

আয়োজকরা জানান, ‘শ্বশুরবাড়ি কৈলাশ থেকে কন্যারূপে দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে এসেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন চার সন্তান সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ ও কার্তিককে। আমরা তাকে বরণ করে নিয়েছি। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার মূল কার্যক্রম।’

তবে করোনার কারণে এবারও দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটা ফিকে হতে চলেছে। পূজার সেই চিরচেনা এলাহী কাণ্ড সবার অগোচরেই লুকিয়ে থাকছে এবারও। প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, মেলা, গান বাজনাসহ সবকিছুতেই দুর্গোৎসবের সেই চির পরিচিত আমেজ পাওয়া যাচ্ছে না এবারও।

এবিষয়ে রাজশাহী মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, নগরীর ৭৫টি মন্ডপে পূজার প্রাথমিক আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। করোনার কারণে এবারও বেশকিছু বিধিনিষেধ মেনেই পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়র মহোদয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দরিদ্র ও অসহায়দের বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করা হয়েছে। তিনি নিজেও উপস্থিত থেকে ৫০০ অসহায়কে শাড়ি উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিটি মন্ডপে ১০ হাজার টাকার অনুদান চেক প্রদান করেছেন মেয়র। সর্বোপরি সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পূজা উদযাপন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, এবছর আরএমপি এলাকায় ৯৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে আমাদের আলাদা আলাদা টহল টিম সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে।

মেলা বা শোভাযাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে এবারও পূজা উপলক্ষে কোনো রকম মেলা বা শোভাযাত্রার অনুমতি দেয়া হয় নি। সর্বসাধারনের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আরএমপি সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখবে বলেও জানান তিনি।

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top