রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

দেবী দুর্গাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে ভক্তকূল


প্রকাশিত:
৯ অক্টোবর ২০২১ ১৫:১৩

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৩

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

দুয়ারে দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। “দেবী তুমি আসবে বলে, শিশিরবিন্দু ঘাসে, মাঠে মাঠে শোভা বাড়ায়, শুভ্রবরণ কাশে...” সৌম্যকান্তি চক্রবর্তীর সেই পঙক্তির মতোই ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবীদুর্গাকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। তাদের সুনিপুণ হাতে নিখুঁতভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে দুর্গা, গণেশ ও কার্তিকসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। এমন চিত্রই চোখে পড়ে রাজশাহী নগরীর মন্ডপগুলোতে।

নগরীর পূজা মণ্ডপগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুর্গার বাহকসহ প্রতিমার শাড়ি ও অলংকার পরানোর কাজ চলছে জোরেসোরে। রংয়ের আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে নানা রং ঢংয়ে। আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রতিটি মণ্ডপ। প্রতিমা দেখতে মণ্ডপে মণ্ডপে ভীড় করছেন দর্শনার্থীরা। এ বছর নগরীর ৭৫টি মণ্ডপে আয়োজন করা হচ্ছে দুর্গোৎসবের। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবারও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনেই উদযাপিত হবে দুর্গাপূজা।

সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবীতে) আসবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে ফিরবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা বানানোর কাজ প্রায় শেষ। রঙ তুলির আঁচড়ে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

ইতোমধ্যে মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের দিন গোনা। মহালয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বছর শেষে আবারও দেবী দুর্গার আগমনে চারদিকে কেবল আনন্দ আর আয়োজন। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সোমবার (১১ অক্টোবর) বোধনের মাধ্যমে মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। আর শুক্রবারে (১৫ অক্টোবর) মহাদশমীতে দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের আনুষ্ঠানিকতা।

নগরীর প্রতিমা শিল্পী কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, প্রতিমা বানানোর কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। পোশাক পড়ানো, চুল লাগানো, মুখোশ পড়ানোর মতো সাজসজ্জার কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই হাতের কাজ শেষ হবে।

আয়োজকরা জানান, গতবারের মতো এবারও পূজায় স্বাস্থ্যবিধির উপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে কতজন দর্শককে একসঙ্গে মণ্ডপে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে, কীভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেসব দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

মন্দির ধোয়া-মোছার কাজও শেষ পর্যায়ে। নগরীর বেশ কয়েকটি মন্দির ঘুরে দেখা যায় শেষ মুহুর্তের ধোয়া-মোছায় ব্যস্ত সময় পার করছে রক্ষণাবেক্ষণকারীরা। এ বিষয়ে ফুদকী পাড়া কালি মাতার মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণকারী চুমকি রানি বলেন, আর কয়েক দিন পরই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ধোয়া-মোছার কাজও প্রায় শেষ।

সর্বশেষ প্রস্তুতির বিষয়ে রাজশাহী মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, এবার নগরীতে সর্বমোট ৭৫টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। যারা দরিদ্র ও অসহায় রয়েছেন তাদেরকেও সাহায্য সহযোগীতা করা হচ্ছে। মন্ডপে মন্ডপে প্রতীমা সাজানোর কাজও শুরু হয়েছে।

দশমীর দিনে শোভাযাত্রার বিষয়ে তিনি বলেন, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। এখন পর্যন্ত সামগ্রিক প্রস্তুতি খুবই ভালো। সুন্দরভাবে সবাইকে নিয়েই উৎসবটি উদযাপন করতে পারবো বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, আরএমপি এলাকায় ৯৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিটি মন্ডপে আমাদের টহল টিম সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে। নগরীর সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।

 

 

আরপি/এসআর-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top