রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


এমপি মোকাব্বিরের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের প্রেমের অভিযোগ


প্রকাশিত:
২ জুন ২০২১ ২০:১৮

আপডেট:
২ জুন ২০২১ ২০:২৫

ছবি: ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন

ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনের নির্বাচিত এমপি গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ লুটপাট, স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আঁতাত, জামায়াত-শিবির অনুসারীদের পুনর্বাসনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন অভিযোগ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন এমপি মোকাব্বির। এর প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন ওসমানীনগর উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা এমপি মোকাব্বিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরা ছাড়াও তার আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। তা না হলে এমপির বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, এমপি মোকাব্বিরের সঙ্গে ‘জামায়াত-শিবির প্রেম’ এলাকায় বেশ আলোচিত। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলার চিহ্নিত রাজাকারদের উত্তরসূরিদের নিয়ে জোট বাঁধেন। এপিএস নিযুক্ত করেন ছাত্রদলের এক নেতাকে। আর হাটে-ঘাটে প্রচার করে চলেছেন- তিনি অতীতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ করেছেন। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে তার নিকটজন রয়েছেন এমন প্রচারণার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করছেন প্রশাসনকে।

আওয়ামী লীগ নেতারা আরও বলেন, এমপি মোকাব্বির সরকারি অর্থলুটসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন বেপরোয়াভাবে। ওসমানীনগর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের জন্য আসা এমপি মোকাব্বিরের সরকারি বরাদ্দ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে লুটেপুটে খেয়েছেন। জোটবদ্ধ হয়ে এই লুটপাট করেছেন এমপির পিএস কয়েছ মিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়া এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমরান রব্বানী। তারা ৩টি ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন।

এমন লুটপাটের কারণে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠন তাদের শরিক দলের এমপি মোকাব্বিরকে ইতিমধ্যে অবাঞ্ছিত, আব্দাল মিয়াকে বহিষ্কার ও এমরান রব্বানীকে বিএনপি দলীয় হাইকমান্ড থেকে শোকজ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতারা আরও অভিযোগ করেন, ইউনিয়নভিত্তিক বরাদ্দ এমপির পিএস কয়েছ তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে প্রকল্প বানিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। অথচ চেয়ারম্যান মেম্বারগণকে কিছুই জানানো হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ মে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে পিআইওকে নিয়ে ঢেউটিন বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মোকাব্বির।

এছাড়াও ওসমানীনগরসহ সিলেটে ১০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে জায়গা নির্ধারণের জন্য পত্র আসে। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন ইউএনও তাহমিনা আক্তার। উপজেলা সদরে টেকনিক্যাল কলেজ হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বড় অংকের টাকা ইনকামের মিশনে নামেন এমপি মোকাব্বিরের ব্যক্তিগত সহকারী কয়েছ মিয়া ও তার সহযোগী চক্র। তিনি বড় অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে গোলাম কিবরিয়া নামে একজনের সাথে অদৃশ্য চুক্তিও হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে গো-চারণ ভূমিতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের দাবি তোলা হয়। এমপি মোকাব্বিরের জনসভা ও সংবর্ধনার আয়োজন করেন এপিএস কয়েছের অনুসারীদের দিয়ে।

এতেই শেষ নয়, তাজপুর ও গোয়ালাবাজার ইউনিয়নে কাজি পদে নিজের লোকদের নিয়োগ দিতে তাজপুরের সাব রেজিস্ট্রার মো. ইউনুছকে দাঁত ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। এরপর প্রশাসনকে জিম্মি করে স্থানীয় শিবির কর্মী মোমিনকে গোয়ালা বাজার ইউনিয়নের কাজি ও উপজেলার মিনা বেগম দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভীকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাজপুর ইউনিয়নের কাজি নিয়োগের ব্যবস্থা করে দেন মোকাব্বির। এনিয়ে এমপি মোক্কাব্বির খানসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এমপির অনুসারী আব্দাল মিয়া বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে পরিষদের থাকা ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে বড়ভাগা নদীতে সেতু প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন। অর্ধকোটি টাকা নিজের পকেটস্থ করতে সেতুটির নামকরণ করেন শেখ হাসিনা সেতু। উপজেলার আরেক রাজাকারপুত্র তারই সহকর্মী এমরান রব্বানী, সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ও হেফাজত নেতা নুর উদ্দিন আহমদ নুন এমপি মুকাব্বির সিন্ডিকেটের সদস্য। উপজেলায় নানা ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে টিআর, কাবিটা ও কাবিখাসহ উন্নয়ন বরাদ্দগুলো লুটপাট করে খাচ্ছেন তারাই।

গত দুই বছরে এমপির পিএস কয়েছ ৭টি যানবাহনের মালিক হয়েছেন। এছাড়া মুজিব শতবর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তাজপুর সুলতানপুর প্রকল্পের মাটি ভরাটের ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্বে থাকা তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিগত দুই বছরে এমপির মাধ্যমে আসা সরকারি বরাদ্দের নামে বেনামে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top