রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


শ্রেণীকক্ষের ৫০০ দিনের নিরবতা ভাঙবে কবে?


প্রকাশিত:
২৫ জুলাই ২০২১ ০২:৩৩

আপডেট:
২৫ জুলাই ২০২১ ১৪:৪৬

দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল ১৬ মাস। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় ৫০০ দিন ধরে স্কুল-কলেজের শ্রেণীকক্ষগুলো নিরবতা পালন করছে! এ বছর খোলার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না এখনো পর্যন্ত। শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন, ২০২১ সালে আদৌ কী খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? কবে ভাঙবে শ্রেণীকক্ষের নিরবতা? এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে? কী করবে?

কঠোর লকডাউনে বেড়াতে যাওয়ার পথ বন্ধ থাকলেও ছুটিতে কী করণীয়- এ প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খুঁজে বের করে ফেলেছে। সে মোতাবেক কাজও শুরু করে করে দিয়েছে তারা। বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে আজকাল। সেটা অনলাইন ক্লাস কিংবা পড়ার টেবিলে নয়। স্মার্টফোনে গেম নিয়ে! অনলাইনে ফ্রি ফায়ার-পাবজি খেলতে বসলে খাওয়া-দাওয়ার কথাও মাথায় থাকছে না এ কিশোরদের।

ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামে এসে কয়েকদিন ধরে এমনটাই দৃশ্যমান হয়েছে। একসাথে দল বেধে স্মার্টফোন নিয়ে বসে বিভিন্ন মোড়ে, খেলার মাঠে, স্কুলের বারান্দায় তারা বসছে মোবাইলে গেমিংয়ে। নিজেদের টাকা খরচ করে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েও চলছে দিনভর ফেইসবুক-ইউটিউবিং। এসবের জন্য কিনেছে কয়েক হাজার টাকা খরচ করে ইন্টারনেট সংযোগে ব্যবহৃত রাউটার, অনুসহ বিভিন্ন ডিভাইস।

মানুষের কাজ করে জমানো টাকা দিয়ে এসব কিনে গেমিংয়ে আসক্ত কিশোররা। শহুরে পরিবেশ এখন গ্রামেও। বিশ্বের ১৫ কোটি ৬০ লক্ষাধিক ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীর মধ্যে দেশের গ্রামগঞ্জের এ কিশোররাও চলে যাচ্ছে বিপথে। বাড়িতে মা-বাবা কোনো কাজ করতে বললে সরাসরি ‘না’ জবাবে বন্ধুদের সঙ্গে গেম খেলতে আড্ডায় মেতে উঠছে তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও এ শিক্ষার্থীদের কী পড়ালেখায় মনযোগী করা সম্ভব হবে?

ইতোমধ্যে ইউনিসেফ ও ইউনেসকো যৌথ বিবৃতিতে দাবি জানিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে। গত ১২ জুলাই সংস্থা দুটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে এবং লাখ লাখ শিশুর পড়াশোনা এখনো ব্যাহত হচ্ছে। ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে, যা ১৫ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটা চলতে পারে না। বন্ধের ক্ষেত্রে স্কুলগুলো সবার শেষে এবং পুনরায় খোলার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে থাকা উচিত।’

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুলের যৌথ ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্কুলে যেতে না পারার কারণে শিশু এবং তরুণ জনগোষ্ঠী যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে নেয়া যাবে না। বর্তমানের অস্পষ্ট সুবিধার জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎকে স্কুল বন্ধ রাখার মাধ্যমে জিম্মি রাখা হচ্ছে। অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আরও বিবেচক হতে হবে। আমরা নিরাপদে যাতে স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে পারি সে বিবেচনা গ্রহণ করতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা এবং ভবিষ্যতে সৃষ্ট হতে যাওয়া জটিলতা সংস্থা দুটি বুঝতে পেরেছে বলেই করোনার প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও এমন চ্যালেঞ্জিং বিবৃতি দিয়েছে। যদিও তা যৌক্তিক। তবে বাংলাদেশের সরকার এখনো বিষয়টি উপলব্ধিতে নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ফলে লাখো শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার ধ্বংসের পথে। এখনই উত্তরণ জরুরী। সেটি করতে এখনই খুলে দিতে হবে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনলাইনে ক্লাস আর নয়, তাতে রয়েছে নানারকম বিড়ম্বনা। শ্রেণীকক্ষেই পাঠদানের ব্যবস্থা করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পথে হাটতে হবে সরকারের নীতি নির্ধারকদের।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top