রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান দখলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার নাম!


প্রকাশিত:
৬ অক্টোবর ২০২২ ০২:২৪

আপডেট:
৬ অক্টোবর ২০২২ ০২:৫০

সংগৃহিত

দেশের আবাসনের খাতের প্রতিষ্ঠান রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির মিরপুরের অফিস সন্ত্রাসী কায়দায় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে সাবেক এমডি এস এ কে একরামুজ্জামানের বিরুদ্ধে। তার উপস্থিতিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গত ২৪ সেপ্টেম্বর অফিস দখলের সময় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতা ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তাদের জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এমন অবস্থায় নিজেদের অফিস ফিরে পাওয়া, দেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আস্থা ধরে রাখতে দ্রুত এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি করেছেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতা। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন এই বিদেশি নাগরিক।

যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তিনি হলেন রাকিন ডেভলপমেন্টের সাবেক এমডি এস এ কে একরামুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচনও করেছেন। তবে অভিযোগের বিষয় জানতে একরামুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

একরামুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১৮৪ কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচারের অভিযোগে দুদকের মানি লন্ডারিং মামলা আছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগকৃত এই প্রতিষ্ঠানে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে চার ঘণ্টা জিম্মি করে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত এবং জোরপূর্বক অফিস বেদখল করে নিয়েছে দুর্নীতির দায়ে বহিস্কৃত সাবেক এমডি’র নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী চক্র।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বাংলাদেশের ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে অনেক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই রাজধানীর মিরপুরে ‘রাকিন বিজয় সিটি’ নামে একটি মেগা আবাসন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে, যেখানে দুই হাজার ফ্ল্যাট, কমার্শিয়াল ভবন, কমিউনিটি ক্লাব, হাসপাতাল, স্কুল ও মসজিদ রয়েছে। এছাড়াও কাঁচপুরে ‘রাকিন ট্রাঙ্কুল টাউন’ নামে আরও একটি মেগা আবাসন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, যেখানে ৫ হাজার ২শ ফ্ল্যাট থাকবে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন একরামুজ্জামান নামে একজন বাংলাদেশি পরিচালক। কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সেটার অনুমোদন নিতে হয়, কিন্ত ২০০৮ থেকে ২০২২ সালে তাকে অব্যাহতির পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি, তাই আইনের ধারা অনুযায়ী তার এই পদ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে অবৈধভাবে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।

ফাদি বিতার বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই এস এ কে একরামুজ্জামান কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। কোম্পানির নামে কয়েকটি অনুমোদনহীন ব্যাংক হিসাব খুলে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে ‘স্টার পোরসেলিন’ নামে একটি কোম্পানির নামে ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। একরামুজ্জামানের ১৪ বছর ধরে এমডি’র দায়িত্ব পালনকালে এই সময়ে কোম্পানির কোন লাভ দেখানো হয়নি, বরং প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।

নানা অনিয়মের কারণে গত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৮১তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একরামুজ্জামানকে সরিয়ে তাকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানান ফিদার।

ফিদার দাবি করেন, এমডির দায়িত্ব নিয়ে দেখেন একরামুজ্জামান কোম্পানির প্রচুর পরিমাণ অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে খরচ করেছেন। কোম্পানিকে সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিতায় আনতে এবং এখানে গ্রাহকদের অর্থ বিনিয়োগকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। এতে একরামুজ্জামান নাখোশ ও ক্ষিপ্ত হন। তার অনিয়মগুলো প্রকাশ্যে আসার পর আমাকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন উপায়ে বাঁধা প্রদান শুরু হয়।

এরপরই তার উপস্থিতিতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে জানান এই বিদেশি নাগরিক। তিনি বলেন, হামলার পর তার এবং ডিএমডি সুমাইয়া তাসনীনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বে-আইনিভাবে চিঠিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও হুমকির মুখে পড়বে। তবে শুরু থেকে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিডার পক্ষ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও ঠিকভাবে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকার পরও সহায়তা করতে গড়িমসি করছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে নারীদের নিরাপত্তা, দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো বিষয় জড়িত বিধায়। তাই দ্রুততার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে বিষয়টি নিজ দেশের দূতাবাসকে অবহিত করার কথা জানিয়ে ফাদি বিতার বলেন, রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর একটি ঘটনা দিয়ে পুরো দেশকে বিচার করতে চাই না। আমি চাই এখানে যে আইন আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এক প্রশ্নের জবাবে এই বিদেশি নাগরিক বলেন, আমরা ব্যবসা করতে চাই। পেশী শক্তি দেখানোর মধ্যে আমরা নেই। কার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে কিনা তাও বিবেচ্য বিষয় নয়।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top