রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


রেজিস্ট্রি অফিস থেকে 'সাংবাদিক হটাও'!


প্রকাশিত:
৯ জুন ২০২১ ০০:০১

আপডেট:
৯ জুন ২০২১ ০০:১৭

ছবি: আব্বাস আলী

নওগাঁর মান্দায় প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে “সাংবাদিক হটাও” বলে জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বের করে সাংবাদিক আব্বাস আলীর উপর হামলা ঘটনা ঘটেছে। হামলার স্বীকার সাংবাদিক মান্দা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং দৈনিক যুগান্তর ও জাগো নিউজের নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এ ঘটে। আহতবস্থায় তাঁকে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের আসাদ আলী জমি রেজিস্ট্রি করতে প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতিতে আসে আসাদ আলী। এ সময় সমিতির এক দলিল লেখকের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। দলিল লেখক জানান, ১২ লাখ টাকার দলিলে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা খরচ হবে। আসাদ আলী বিষয়টি তাঁর ছোট ভাই সাংবাদিক আব্বাস আলীকে জানায়।

আব্বাস দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করে, সিটি কর্পোরেশন এরিয়াতে রেজিস্ট্রেশন ফি ১১% থেকে ১৩%। জেলা সদরের বাইরে ৯%। গ্রামের জমি সাড়ে ১০% হিসেবে রেজিস্ট্রেশন ফি ধরা হচ্ছে। সরকারি হিসেবে আরোও কম হওয়ার কথা।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আব্বাস আলী দলিল লেখক সমিতিতে স্বশরীরে গিয়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানতে চায়। কিন্তু বাবুল আক্তার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি আবারও বাবুল আক্তারের কাছে জানতে চান সরকারি খরচ আসলে কত? এতে বাবুল আক্তার “সাংবাদিক হটাও” বলে জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বের করে দেয়।

বিষয়টি সম্পর্কে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে অফিসের ভেতর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে সাংবাদিক আব্বাসকে। সেই বাবুল আক্তার ও দলিল লেখক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন রানার নেতৃত্বে ১০/১২ জন বুকে পিঠে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে শুরু করে। পরে কয়েকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

জানতে চাইলে আহত আব্বাস আলীর বড় ভাই আসাদ আলী বলেন, জমির রেজিষ্ট্রি করতে অতিরিক্ত ফি চাওয়ার প্রতিবাদ করায় আমার সামনে ১০-১২জন দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা ঘিরে রেখে সংঘবদ্ধভাবে আমার ছোট ভাইয়ের উপর হামলা ও মারপিট করে। আমি বাঁধা দিতে গেলে আমাকেও চড়-থাপ্পর মারে। আমি জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

প্রত্যক্ষদর্শী শরিফুল ইসলাম, আমিও জমি রেজিষ্ট্রি করতে গিয়েছিলাম। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে দলিল লেখক সমিতির ১০-১২ সদস্যরা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের ভিতরে সাংবাদিক আব্বাসকে মারপিট করতে লাগলে আমি উদ্ধার করতে গেলে আমি নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হই। এঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

আহত সাংবাদিক আব্বাস আলী জানান, দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক বাবুল আক্তারের কাছে দলিলের সরকারি খরচ জানতে চাইলে সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন রানা আমার ওপর রেগে গিয়ে সমিতি চত্বর থেকে বের হতে করে দেয়। এরপর আমি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে
যাই। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রবেশ করামাত্র ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর বাবুল আক্তার ও আলামিন রানা সহ ১০/১২জন চারদিক থেকে ঘিরে রেখে অতর্কিত হামলা চালায়। মারপিট করে পকটে থাকা টাকা ছিনতাই করে নেয়। আসলে সেখানে সবকিছু দালালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়। আমি দালালির টাকা দিতে না চেয়ে শুধু অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, ঘুষ আর দালালি ছাড়া কোন কিছুই হয় না এখানে। আমি হামলাকারী নামে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মান্দা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমি অফিসে ছিলাম না। বিষয়টি জানার পর আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। তারা কেউ বসতে রাজি হয়নি। তবে আমি বিষয়টি তদন্ত করছি।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি মৌখিকভাবে জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি তদন্তের জন্য। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরপি/ এস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top