রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


বৈকালিক চেম্বার: রোগী না থাকায় রুমে নেই চিকিৎসকও


প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২৩ ১০:৫৬

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১৪

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতেও ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বার’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজশাহীর মধ্যে শুধুমাত্র পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবা চালু হলো। নির্ধারিত ফি নিয়ে দিনের পাশাপাশি বিকেলেও রোগী দেখবেন সরকারি চিকিৎসকরা।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তবে কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে রোগী উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সেবা চালুর প্রথম এক ঘণ্টায়ও কোনো রোগীর দেখা পাওয়া যায়নি । এদিকে রোগী না থাকায় চিকিৎসকদেরও দেখা পাওয়া যায়নি নির্ধারিত কক্ষে। প্রথম দিনে রোগী না থাকায় চিকিৎসকরা তাদের রুমে ছিলেন না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, পবায় সেবা প্রদানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাবেয়া বসরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক ও পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লসমী চাকমা।

নিয়ম অনুযায়ী উদ্বোধনের পরপই শুরু হয় রোগী দেখা কার্যক্রম। অতিথিরাও অপেক্ষা করতে থাকেন প্রথম কোনো রোগীর আসার। তবে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও রোগীর দেখা না পেয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন এমপি, সিভিল সার্জন ও ইউএনও। এর সামান্য পরই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্ধারিত চার কক্ষের কোনোটিতেই পাওয়া যায়নি কাউকেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর এক অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক তার কক্ষে প্রবেশ করেন।

চিকিৎসকদের কক্ষের বাইরে রোগীদের সিরিয়াল দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন দুই কর্মচারী। তাদেরকে একজন বলেন, ‘আমরা বসে আছি। তবে এখনও কোনো রোগী আসেনি।’

তবে অপরজন বলেন, ‘প্রথমে একজন এসেছেন। এখনও রেজিষ্ট্রার খাতা ঠিকভাবে না পাওয়ায় নাম লিখে রাখা হয়নি। স্যারের রুমে পাঠানো হয়েছিল, হয়তো উনি লিখে রেখেছেন।’

তবে ওই চিকিৎসকের এক পিয়নের সহায়তায় রুমে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার টেবিলেও কোনো খাতার দেখা মেলেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাবেয়া বসরী বলেন, ‘এই কার্যক্রমে আমাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না, হঠাৎ জানানো হয়েছে। আমরা খুব কম সময়ে কার্যক্রম আয়োজন করেছি। তবে ৪ জন কনসালটেন্ট ও ১০ জন মেডিকেল অফিসারকে ভাগ করে এই দয়িত্বে দিব। আগামী শনিবার থেকে এটি ভালোভাবে পরিচালিত হবে।’

ডাক্তার না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ৪ জনের মধ্যে দুইজন ডাক্তারের ডিউটি দেওয়া হয়েছে। গাইনি ও সার্জারি ডাক্তার আমার সামনে বসা। এমপি সাহেব চলে যাওয়ার পর ডাক্তার সাহেবরা নামাজ পড়তে (যদিও দুপুর ৩টার পরই এমপি চলে গেছেন) উপরের তৃতীয় তলায় যায়। আপনাকে তো অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের ডাক্তাররা অনেক কষ্ট করে। আপনার শুরুতেই এমন কথা বললে তাদের মন ভেঙে যাবে। আমার ডাক্তাররা কষ্ট পাচ্ছে আপনার কথা বলায়।’

‘সব রুমে ডাক্তাররা থাকবেন বিষয়টি এমন না। আমাদের দুইজন ডাক্তার ও একজন ডিউটি ডাক্তার থাকবে। আপনাদের রিপোর্ট করার আগে আর একটু যাচাই বাছাই করেন। আমরা রমজান মাসে সারাদিন অনেক কষ্ট করে রোগী দেখছি, আর আপনারা তো তীরে এসে তরী ডুবিয়ে দিলেন বলেও উল্লেখ করেন চিকিৎসক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক প্রথমে ‘বিষয়টি জানা নেই’ বলে রাবেয়া বসরীর সাথে কথা বলতে বলেন।

তবে একটু পরেই নিজে কল দিয়ে বলেন, ডাক্তাররা আছেন, ‘তারা টিএইচও এর রুমে আছেন। সেখানে তাদের আজ ইফতারী করার কথা। আমারও থাকার কথা ছিল। আগে খোঁজ নেন, তারা সেখানে আছে।’

প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিভাগের ১০ জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের সাত জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা, খুলনা বিভাগের পাঁচ জেলা, রাজশাহী বিভাগের তিন জেলা, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা, বরিশাল বিভাগের তিন জেলা এবং সিলেট বিভাগের চার জেলায় ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে দেশের সব হাসপাতালে এ কার্যক্রম চালু করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top