রামেক করোনা ইউনিটে মৃত্যুর অর্ধেকই চাঁপাইনবাবগঞ্জের
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত এক সপ্তাহে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৬০ জনই করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর। এর মধ্যে ৩৭ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ও রাজশাহীর ২৩ জন।
মৃত ৭২ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান ৪৫ জন। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার আগেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তবে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর নমুনা পরীক্ষায় অধিকাংশের রিপোর্টই করোনা পজিটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, গত এক সপ্তাহে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ৮ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৭২ জন। এর মধ্যে ৪৫ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এর মধ্যে ১ জুন সাতজন, ২ জুন সাতজন, ৩ জুন নয়জন, ৪ জুন ১৬ জন, ৫ জুন ৮ জন, ৬ জুন ছয়জন, ৭ জুন ১১ জন ও সর্বশেষ ৮ জুন আটজন মারা যান।
তিনি আরও বলেন, এক সপ্তাহে মারা যাওয়া ৭২ জনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৭ জন এবং রাজশাহীর ২৩ জন। সে হিসেবে এ হাসপাতালে মৃত্যুর হার করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং রাজশাহীর ৩১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগিদের অধিকাংশই ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত। এ জন্য সেখানকার রোগির মৃত্যু হার বেশী বলেও জানান ডা. সাইফুল ফেরদৌস।
এদিকে, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘন্টায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান। এদের দুইজনেরই বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং একজন রাজশাহীর। বাকিরা নমুনা পরীক্ষার আগেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে রাজশাহীর তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ও পাবনার একজন।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা যান। এর মধ্যে আইসিইউতে দুইজন, ৩ নং ওয়ার্ডে দুইজন এবং ১৬, ২২, ২৫ ও ২৯ নং ওয়ার্ডে একজন করে মারা যান বলে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন। রাজশাহীর ১৬, চাঁপাইয়ের ১৪, নওগাঁর ১ ও নাটোরের ২ জন। মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৫৭ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১২৭, চাঁপাইয়ের ১০২, নওগাঁর ৯, নাটোরের ১১, পাবনার ৪, কুষ্টিয়ার ৩ ও জয়পুরহাটের ১ জন। আইসিইউতে রয়েছেন ১৭ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫৭ জনের মধ্যে ১২৫ জনের করোনা পজেটিভ রয়েছে। বাকিদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, রাজশাহীতে আবারও বেড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার। সোমবার রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে রাজশাহীর ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৭৪ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দুইটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা যায়, আগের দিনের চেয়ে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার হয়েছে ৪৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। যা এর আগের দিন রোববার ছিল ৪১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর আগের দিন শনিবার ছিল ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং গত শুক্রবার এ জেলায় শনাক্তের হার ছিল ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুই ল্যাবে তিন জেলার ৫৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৪ জনের পজিটিভ এসেছে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৫ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে এ জেলার নমুনা পরীক্ষা হয়। ফলাফল অনুযায়ী এ জেলায় শনাক্তের হার ৬০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগে গত শনিবার এ জেলায় শনাক্তের হার ছিল ৬১ দশমিক ৩৬ এবং গত শুক্রবার ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এছাড়াও নওগাঁ জেলার একজনের নমুনা পরীক্ষা করে তার করোনা পজিটিভ আসে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে এ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ রোধে অব্যাহত রয়েছে অনির্দিষ্টকালের বিধিনিষেধ। সোমবার থেকে দুইঘন্টা বাড়িয়ে বিকেল ৫ টার পর দোকান-পাটসহ সব বন্ধ রাখা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসনের ছয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশে পাশাপাশি মাঠে কাজ করছে রাজনৈতিক দলের নেতারাও। এছাড়াও শর্ত সাপেক্ষে লকডাউন শিথিল করে কঠোর বিধি-নিষেধ দেয়া হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
আরপি/এসআর
বিষয়: রামেক করোনা ইউনিট
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: