রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


এবারও ফুটপাত দোকানিদের মুখ ভার


প্রকাশিত:
১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:১৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫৭

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। সরগরম হতে শুরু করেছে রাজশাহীর মার্কেট, শপিংমলসহ বিপণি বিতানগুলো। কিন্তু এবারও সেই তুলনায় জমেনি গরিবের শপিংমল খ্যাত ফুটপাতের দোকানগুলো। বড় বড় শপিংমলের মতো জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম না হলেও তেমন ভিড় নেই ঈদ বেচা-বিক্রিতে।

ফুটপাত বিক্রেতাদের দাবি, করোনার পর থেকেই ব্যবসায় মন ভরছে না তাদের। একদিকে করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি- সব মিলিয়ে ব্যবসায় বেহাল দশা কেটে উঠতে পারছে না কেউই। এমন কি লাভ তো দূরের কথা ঈদের বাড়তি কালেকশন নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অনেকে। 

নগরীর জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া, রেলগেট, নিউ মার্কেট ও স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাত দোকান সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকছেন দোকানিরা। তবে সকাল, দুপুর কিংবা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও জমছে না বিক্রি। অনেকে অলস সময় কাটাতে পত্রিকা পাঠ কিংবা মোবাইলে পার করছেন অবসর সময়।

ঈদ ঘিরে বেচা-বিক্রি জানতে নগরীর রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ফুটপাত দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, বেচাকেনার খুবই খারাপ অবস্থা। অন্য বার ১৫ রোজা পার হয়ে গেলে ব্যবসা জমতো কিন্তু এবার ২৫ রোজা হতে চললেও কিছুই নাই। যে দু-চারটে বিক্রি হচ্ছে খাবার কিনতেই শেষ। ঈদের কালেকশন যার জন্য আনছি তারাই মার্কেটে নাই। শেষ দু-তিন দিন কিছু হয় যদি সেই আশায় আছি।

একই এলাকার বিমান ঘোষ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, রোজার শুরু থেকেই একই অবস্থা। কাপড় বিক্রি করবো এমন লোকজনই তো নাই। মনেই হচ্ছে না ঈদের বাজার চলছে। অথচ আর এক সপ্তাহও বাকি নেই ঈদের।

বিক্রি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ, সবকিছুর দাম বেশি, পেটে খাবার দিবে নাকি জিনিস কিনবে মানুষ? লোকজনের কেনাকাটার কোনো চিন্তাই নাই। মনে শান্তি না থাকলে যা হয়, কারো হাতের অবস্থা ভালো না। বাজারে কিছু কিনতে গেলে ওরাই সব টাকা খেয়ে নিচ্ছে।

এদিকে, বিক্রি না থাকায় দোকানে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন বিক্রেতা মিজানুর রহমান মিজান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেচাবিক্রি কমই বলা যায়। সচরাচর ফুটপাতে দিনমজুর-রিকশা চালকরাই কেনেন। তাই রোজার শেষ ভাগেই বিক্রি হয়। কিন্তু ২৫ রোজা তো পার হচ্ছে, সেই বিক্রিটা তো হচ্ছে না। আজ এখন পর্যন্ত হাজার খানেক টাকার বিক্রি হয়েছে। দেখি শেষ কয়েক দিনে কি হয়।

নগরীর রেলগেট এলাকার ফুটপাত দোকানি হাফিজুল ইসলাম বলেন, রোজার শেষ দিকে এসেও বেচাবিক্রি শুরু করতে পারিনি। তুলনামূলক বিক্রি নেই বললেই চলে। লোকজন তো আসে না, না আসলে কার কাছে বিক্রি হয়। খুবই খারাপ অবস্থা চলছে।

গণকপাড়ার দোকানি সাফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে খুবই কম লোক আসছে। তবুও কিছু তো করার নেই, আল্লাহর ওপর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। ঈদের সব কালেকশন রেডি রাখছি। কিন্তু কি যে হবে বলা যাচ্ছে না।

জিরো পয়েন্ট এলাকার ফুটপাত দোকানি রাসেল আহমেদ বলেন, অন্য বছর এই শেষ সময়ে দম নেওয়ার সময় থাকতো না। নামাজে যাওয়ার, ইফতার করার সময় থাকতো না। আর এবার বিক্রির কিছুই জমে নি। লোকজন একটাও নেই, দেখতেই পারছেন। এছাড়াও বঙ্গবাজারের দুর্ঘটনার পর সব কাপড়ের দাম বেড়েছে। লোকজন যদি দু-চারজন আসেও তো দাম-দর শুনে চলে যাচ্ছে।

মেয়েকে নিয়ে ঈদ মার্কেট করতে আসা জোহরা বেগম বলেন, সবকিছুরই দাম বেশি। তবুও তো কিনতে হবে। অনেক ঘুরাঘুরি করে শাড়ি, থ্রি-পিস, প্যান্ট ও গেঞ্জি কিনছি। কিছুই করার নাই। ঈদে তো না কিনে থাকা যায় না।

জানতে চাইলে নগরীর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন বলেন, শুধু ফুটপাত কেন, সবার বেচাবিক্রির করুণ দশা। এখন যে ঈদের মৌসুম চলছে বোঝার উপায় নেই। সবাই কাপড় এনে দোকান ভরে রাখছে, কিন্তু কেনার লোক নেই। খুব ভয়াবহ অবস্থা চলছে সবার।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top