রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


দেশসেরা রাজশাহী কলেজের জিমনেসিয়ামের দুরবস্থা


প্রকাশিত:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:০৯

আপডেট:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:০৩

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে টানা চতুর্থবারের মতো দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী কলেজ। শিক্ষার্থীদের ফলাফল, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি, শিক্ষার পরিবেশ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার, ক্রীড়া কার্যক্রম, নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার, সহশিক্ষা কার্যক্রম, অনুষ্ঠানমালা উদযাপনসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩১টি সূচকে শ্রেষ্ঠ বলে নির্বাচিত হয়েছে দেশের তৃতীয় প্রাচীন বিদ্যাপীঠটি।

তবে সবুজের আবরণে বেষ্টিত লাল-সাদা ভবনে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে আছে জিমনেসিয়াম। অথচ জাতীয় পর্যায়ে বডিবিল্ডারদের কৃতিত্ব এবং মিষ্টার বাংলাদেশ খেতাব প্রাপ্ত পুরস্কারসহ বহু পুরনো স্মৃতি রয়েছে এই জিমনেসিয়ামের।

জানা যায়, ১৯৬২ সালে টিপু, মনির, রওশন, ইমরান, মাহবুব, বাবুসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী কলেজের সহায়তায় এই জিমনেসিয়াম স্থাপনের কাজ শুরু করেন। তৎকালীন কলেজ প্রশাসন জায়গা হিসেবে বরাদ্দ দেন মহসিন ভবনের কয়েকটি রুম। সেই থেকেই নিজ ক্যাম্পাসে শরীরচর্চার সুযোগ পায় রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীরা।

তবে সময় গড়িয়ে গেলেও উন্নয়ন হয় নি দেশসেরা কলেজের জিমনেসিয়ামটির। কলেজের অন্য সকল ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোয়া লাগলেও উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও লাগে নি এই ব্যায়ামাগারে। একসময় স্থানীয় কিছু স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে এর যাত্রা শুরু করা জিমনেশিয়ামে বর্তমানে ২/৩টি ভাঙ্গা চেয়ার, একটি অব্যবহৃত টেবিল, ৪টি ফ্যান যার দুটিই নষ্ট, একটি লাইট থাকলেও সেটা জ্বলেনা।

আর উপকরণ বলতে ব্রিটিশ সময়কালের কিছু বারবেল, বেশ কিছু পুরনো ডাম্বেল, লিফটিং বার, হ্যাস স্কোয়াট, একটি ল্যাটপুল মেশিন, কিছু ভাঙ্গা আয়না আর পুরনো কিছু সরঞ্জাম। পাশের এক দেয়ালে রাখা হয়েছে কিছু পদক, যা ধরে রেখেছে অর্জিত কৃতিত্বের স্মৃতি। তবে জিমনেসিয়াম জুড়ে নেই কোনো প্রশিক্ষক।

জিমনেসিয়ামে ৩০ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা আমজাদের হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আগে জিমনেসিয়ামের অবস্থা এমন ছিল না। অনেক শিক্ষার্থী ও আশেপাশের লোকজন এখানে আসতো, ব্যায়াম করতো। কিন্তু আধুনিকতার সাথে তাল মেলাতে না পেরে এটি রুপ ও কৃতিত্ব দুটোই হারিয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালে এখানকার তৎকালীন বডিবিল্ডার আব্দুল আহাজ, শিমুল, জাফর মি: বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। সেই প্রতিযোগিতায় তারা ১ম ও ২য় স্থান অর্জন করেন।যার পদক এখনও সাজানো আছে।

তিনি আরও বলেন, আগে অনেক বড় মাপের লোকজন এখানে ব্যায়াম করতে আসতো। কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য একদম ফ্রি এবং অন্যদের ২০০-৩০০ টাকা ফি নেয়া হয়। শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ খোলা হয় রুমগুলো। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে বন্ধ করা হয় কার্যক্রম।

আমজাদ হোসেন আরও বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান স্যার জিমননেশিয়ামটির উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছিলেন। তবে তা আর তেমন অগ্রগতি পায়নি। শুধু কয়েকটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে রুমটি।

জিমনেসিয়াম ঘুরে দেখা যায়, কলেজের শিক্ষার্থী রাতুল, মানিক, মিঠু, রাসেলসহ অনেকেই এসেছেন ব্যায়াম করতে। নিজ শিক্ষাঙ্গনে এমন সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা। তবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, ব্যায়ামের পরিবেশ ও সরঞ্জামাদি না থাকায় তারা হতাশ প্রকাশ করেছেন। দ্রুতই জিমনেসিয়ামের সংস্কার করে ব্যায়ামের পরিবেশ তৈরি করতে কলেজ প্রশাসনের সুনজর কামনা করেন তারা।

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, অতীতে কলেজের পার্শ্ববর্তী কিছু ব্যায়ামবিদ নিজ উদ্যোগে জিমনেশিয়ামটি স্থাপন করেন। তৎকালীন কলেজ প্রশাসন তাদের জায়গা দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। তারা নিজেদের অর্থায়নে একসময় এটার পরিচালনা করতো। বর্তমানে তাদের তেমন পরিষদ বা কমিটি নাই।

তাদের কাছে থেকে জিমনেসিয়ামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে কোনো আবেদনও আসেনি। জিমনেসিয়ামটি পুরোটাই তাদের তত্ত্বাবধানে হওয়ায় কলেজ এর সাথে সম্পৃক্ত না। তাই আমরা এ বিষয়ে নিজ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে পারি না।

যুবসমাজের জন্য শরীর চর্চা অনেক দরকারী উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, জিমনেসিয়াম কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের কাছে আবেদন করে তাহলে কলেজ প্রশাসন তাদের পরিবেশ উন্নয়নে এবং কক্ষ সংষ্কারে সহায়তা করতে চেষ্টা করবে।

কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য জিমনেসিয়াম নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, ‘কলেজ প্রশাসন ও সরকার কর্তৃক মাঠ উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য সুইমিংপুল ও আধুনিক জিমনেসিয়াম নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সেই প্রস্তাবনা পেশ হয়েছে এবং এটা অপেক্ষমান রয়েছে।’

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top