রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

বন্যায় প্লাবিত গ্রাম, ঘরেই বাবাকে দাফন


প্রকাশিত:
২৭ জুলাই ২০২০ ২২:৩৬

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২০:১৮

 ঘরে বাবাকে দাফন। ছবি: সংগৃহীত

পুরো গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। বাইরে কিঞ্চিত শুকনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে মৃত বাবাকে অগত্যা ঘরের মেঝেতেই কবর দিয়েছেন ছেলে।

এমন ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বড়বিহানালী ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামে। ছেলে আবুল হোসেন বাগাতি (৫০) নিজেই গত বুধবার মৃত পিতাকে শয়ন ঘরের পাশের বৈঠক ঘরে কবর দিয়েছেন। বন্যার পানি বাড়ার কারণে ঘরের ভেতরেই কবর দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'চলমান বন্যায় গোরস্থান ডুবে গেছে। শুকনো জায়গাও নাই। তাই বিপাকে পড়ে বাবাকে ঘরের ভেতর কবর দিয়ে তালা মেরে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন এই গ্রামের কেউ মারা গেলে ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

আবুল হোসেন বাগাতি জানান, গত মঙ্গলবার রাতে বৃদ্ধ বাবা আবু তাহের (৮৭) মারা যান। নিজেদের কবরস্থানসহ আশপাশের এলাকা ডুবে যাওয়ার কারণে নিরুপায়ে তাঁদের বৈঠকখানায় কবর খনন করে সেখানেই দাফন করা হয়েছে।

খবর পেয়ে রোববার সরেজমিনে গিয়ে বৈঠকখানার ভেতরে কবর দেখা যায়। বাহির থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে সেখানে তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি ঘরের তালা খুলে তার বাবার কবর দেখান। তিনি জানান, তারা বৈঠক খানার পাশের বাড়িতে থাকছেন। বাড়িতে অতিথি আসলে সেখানে (বৈঠকখানায়) রাখতেন। তারাও মাঝে মধ্যে থাকতেন বৈঠকখানায়। সেটা এখন বাবার কবর বলে জানান তিনি।

এদিকে, বন্যায় পুরো গ্রামটি (বেড়াবাড়ি) এখন ভাসছে। এই গ্রামের তিনশতাধিক লোকজন গত এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়াও আশপাশের আরও দুটি গ্রামের বন্যার পানি ঢুকে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু ও বাড়ির মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পুরো গ্রামবাসী। এ কারণে অনেকে কমদামে গবাদি পশু বিক্রি করে দিয়েছেন।

আবার অনেকে সড়কে বা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে রেখে এসেছেন। পানিবন্দী হওয়া লোকজনদের মধ্যে খাবারের কষ্ট দেখা দিয়েছে। নলকূপ ডুবে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধ পানিও পান করতে পারছেন না। অনেককে উঁচুস্থানে বা বাড়ির ছাদে রান্না করতে দেখা যায়। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

রোববার পর্যন্ত সেখানে কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও খোঁজ-খবর নেননি বলে অভিযোগ করেন। আখিজান বেগম (২৮) নামের একজন বাসিন্দা বলেন, তাদের বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। ঘরের ভেতরের পানি সেচে সেখানে খাটের ওপর কোনো রকম রাত পার করছেন। জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন শ্রমিক বলেন, বাজার ও রান্না করার ব্যবস্থা নেই। শিশু সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছেন বলে জানান।

স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার জানান, এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের লোকজন বন্যাকবলিত। গ্রামের লোকজন পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গবাদি পশু ও মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গ্রামের রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না।

বড়বিহানালী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান বলেন, সরকারি ভাবে এখনো কোনো ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তিনি তালিকা জমা দিবেন। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তিনি গ্রামটিতে যাননি বলে স্বীকার করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। অনেক এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। তবে বেড়াবাড়ি গ্রামের লোকজনদের দুর্ভোগের বিষয়ে তাকে কেউ জানায়নি বলে জানিয়েছেন।

 

আরপি/আআ-১৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top