রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

প্রতারণার ফাঁদে নি:স্ব সন্তান

মৃত্যুর একমাস পর স্বামীকে জীবিত দেখিয়ে স্ত্রীর অভিনব জালিয়াতি!


প্রকাশিত:
৬ মার্চ ২০২২ ১০:৪৯

আপডেট:
৬ মার্চ ২০২২ ১১:৪১

ছবি: সংবাদ সম্মেলন

রাজশাহীতে মৃত্যুর একমাস পর স্বামীকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া স্বাক্ষরে কাগজপত্র জালিয়াতি ও টাকাপয়সা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এতে ছেলে সিরাজ উদ্দিনের প্রায় এক কোটি টাকা খোয়া গেছে বলে তিনি দাবি করেছেন। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আহমেদ সোহেলের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

শনিবার (৫ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানান ভুক্তভোগী সিরাজ। তার বাসা নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায়। সিরাজের বাবার নাম সারওয়ার উদ্দিন। অভিযুক্ত ব্যক্তি তারই সৎ মা আয়েশা আক্তার।

ভুক্তভোগী সিরাজ বলেন, আমার বাবা ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই মারা যান। তিনি দুটি বিয়ে করেছিলেন। মৃত্যুর পর আমার মা আরেকজনকে বিয়ে করেন। আর আমার সৎ মা আয়েশা আক্তার বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে শুরু করেন অপকৌশল। জীবদ্দশায় আমার বাবা একটি পারিবারিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করে সেখানকার চেয়ারম্যান হন।

তিনি বলেন, সোসাইটির অধীনে বাবা সিটি কম্পিউটার সায়েন্স বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট নামে একটি কলেজ গড়ে তোলেন এবং অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুর একমাস পর ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর কলেজের একটি মিটিংয়ে আমার সৎ মা কয়েকজনের সঙ্গে যোগসাজস করে বাবাকে জীবিত দেখান এবং মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের জায়গায় বাবার ভুয়া স্বাক্ষর দেন। চেয়ারম্যান হিসেবে বাবার স্বাক্ষর দেখিয়ে কারিগরি বোর্ড থেকে কলেজের ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন নেন আয়েশা। অথচ আমার বাবা মৃত।

সিরাজের ভাষ্য, প্রাইম ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে তার বাবার একাউন্ট ছিল। বাবার মৃত্যুর পর প্রাইম ব্যাংকে গিয়ে একাউন্টের তথ্য চান তিনি। সেসময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপক শওকত কামাল সরকার বলেন, ‘সারওয়ার উদ্দিন নামে খোলা অ্যাকাউন্টে কোনো নমিনি নেই।’ টাকা উত্তোলন করতে হলে আদালতের মাধ্যমে আইনগতভাবে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শও দেন তিনি। তবে কয়েকদিন পর চল্লিশা অনুষ্ঠানে সকলের সামনে তার সৎ মা ওই একাউন্টে থাকা ৯২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সিরাজ বলেন, সৎ মায়ের কথা শুনে হতবম্ব হয়ে পড়ি। কেননা ব্যাংক অফিসার আগেই জানিয়েছিলেন, ওই একাউন্টের কোনো নমিনি নেই। ফলে আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু আয়েশা সমাধান না করে আমাকে বাবার বাসায় প্রবেশে বাধা দেন এবং তার পক্ষের লোকজন আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এসব ঘটনায় সবশেষ আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলা দায়ের করলে সৎ মা কারাগারেও যান। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সিরাজ বলেন, সৎ মায়ের দাপটে আমি বাবার বাসায় ঢুকতে পারছি না। গেলেই নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। সৎ মায়ের জালিয়াতিতে আমার প্রায় এক কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং আইনি লড়াইয়ে ন্যায়বিচার কামনা করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আয়েশা আক্তার বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। আর হুমকি দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। সিরাজই আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাছাড়া আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন। এ ব্যাপারে আদালত ফায়সালা করে রায় দেবেন।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৬



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top