রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে টাকার মালা পরিয়ে সংবর্ধনা


প্রকাশিত:
৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:৫৪

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৩

ছবি: টাকার মালায় সংবর্ধনা

রাজশাহীর বাঘায় চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঢাক-ঢোলের বাদ্য বাজিয়ে বিজয় র‌্যালি করেছেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বররা। আর সেই র‌্যালিতে বেসরকারিভাবে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বরদের গলায় টাকার মালা পরিয়ে এলাকাবাসি সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করেছেন।

গত ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে শুরু করে নির্বাচনী এলাকার পাড়া-মহল্লায় বিজয় র‌্যালি করেন তাঁরা। উপজেলার যোগাযোগ বিছিন্ন পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ডিএম মনোয়ার হোসেন বাবুল দেওয়ান বিজয়ী মেম্বরসহ উপজেলার তিনটি বাউসা, আড়ানী, চকরাজাপুর ইউনিয়নের অনেকেই শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে ভুড়িভোজসহ বিজয় র‌্যালি করেছেন।

উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে আ’লীগ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ডিএম মনোয়ার হোসেন বাবুল দেওয়ান। তাঁর সাথে নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলামসহ কয়েকজনের গলায় ছিল টাকার মালা। তাঁদের গলায় ঝুলছিল হাজার টাকা, পাঁচশ টাকা, একশ টাকা, পঞ্চাশ টাকা, বিশ টাকা, দশ টাকার নোট।

তাঁদের এমন কাজে অসন্তোষ ও বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা সুশীল সমাজের লোকজন। এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাও। স্থানীয় অনেকের মতে, টাকার মালা গলায় পরে জানান দিয়েছেন টাকা ছাড়া নির্বাচন হয় না। যাদের অনেক টাকা আছে তাঁদের সাথে কেউ যেন লড়তে না আসেন।

ইউনিয়নটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্য প্রার্থী হেলাল উদ্দীন বলেন. টাকার জোরে নির্বাচিত হয়েছেন বলেই টাকার মালা গলায় পরে বিজয় র‌্যালি করেছেন। তিনি সহিদুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ২৭ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। বিজয়ী অনেক মেম্বর ফুলের ও টাকার মালা গলায় পরে নিজ নিজ ওয়ার্ডে র‌্যালি করেছেন। সোমবার থেকে বিজয় র‌্যালি শুরু করেছেন চেয়ারম্যান-মেম্বররা।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান শিশির মন্ডল জানান, তাঁর নিজ ওয়ার্ডে বিজয় র‌্যালি করেছেন। ওয়ার্ডের লোকজন হাজার টাকা, পাঁচশ টাকা, এক’শ টাকা, পঞ্চাশ টাকা, বিশ টাকা, দশ টাকার নোট দিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছেন। সব মিলে ত্রিশ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি।

বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ডিএম মনোয়ার হোসেন বাবুল দেওয়ান বলেন, 'নিজের ইচ্ছায় টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরিনি। এলাকার জনগণই তাঁদের নিজেদের টাকা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরিয়ে দিয়েছেন। তবে কত টাকা দিয়ে মালা দিয়েছে তা জানাতে পারেননি।

পরাজিত স্বতন্ত্র (আওয়ামীলীগ দলের বহিস্কৃত) চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল আযম বলেন, চর এলাকার রেওয়াজ অনুযায়ী নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বরকে এভাবেই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তবে আইন সম্মত না হলে বন্ধ করা উচিত বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুল আলম বলেন, 'বিজয়ীদের র‌্যালি নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু, তাঁরা বিধি নিষেধ মানছেন না। টাকার মালা গলায় পরে বিজয় র‌্যালি করা একটি অশুদ্ধ কর্ম। এতে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলবেন। যেহেতু নির্বাচন পরবর্তী এই ঘটনা, সেহেতু আমাদের পক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'

এছাড়াও উপজেলার আরো দুটি বাউসা ও আড়ানী ইউনিয়নে নির্বচন পরবর্তী সময়ে বিজয় র‌্যালিতে আড়ানী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম গলায় ফুলের মালা দেখা গেলেও টাকার মালা দেখা যায়নি।

অপরদিকে বাউসা ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান এখনও কারাগারে রয়েছেন। তবে এই দুই ইউনিয়নে নব নির্বাচিত অনেক মেম্বরদের বিজয় র‌্যালিতে টাকার পরিহিত ছবি ফেজবুক পেইজে দেখা গেছে। ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে চকরাজাপুরসহ ৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

আরপি/এসআর-১১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top