রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জাহান্নামে যাক’

মাস্ক ছাড়াই করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি, সাংবাদিক প্রবেশেই বাঁধলো বিপত্তি


প্রকাশিত:
১৯ জুন ২০২১ ০৩:০০

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৯

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিট

রাজশাহীতে ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতি। প্রতিদিনিই মৃত্যুর মিছিলে নব সংখ্যা ভাবিয়ে তুলছে সকলকে। আর এই অদৃশ্য যুদ্ধের সঙ্গে প্রথম সারি থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও। কিন্তু কিছু অসচেতন ব্যক্তির হটকারীতাই করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে।

করোনার সংক্রমণ যখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে, সেসময় স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই করোনা ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন কিছু দায়িত্বরত সেবাকর্মী। এমন অভিযোগের অনুসন্ধানে নামলে তার সত্যতাও মেলে। আর এমন চিত্র সাংবাদিকের নজরে আসায় হাসপাতালে প্রবেশে বিপত্তি তুলে ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জাহান্নামে যাক’ মন্তব্যসহ সাংবাদিকতা সর্ম্পকে বাজে মন্তব্য, গালিগালাজসহ দেখে নেয়ার হুমকিও দিলেন-রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের দুই স্বাস্থ্যকর্মী।

শুক্রবার (১৮ জুন) সরেজমিনে দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার রিপোর্টার মাহাবুল ইসলাম রামেক হাসপাতালের ২৭ নম্বর করোনা ওয়ার্ডে গেলে এমন ঘটনা ঘটে। এসময় তাদের নাম জানতে চাইলে এই সাংবাদিকের উপর চড়াও হন তারা। দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার এই প্রতিবেদক জানান, রামেক হাসপাতালের কিছু স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি করলেও নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি সর্ম্পকে উদাসীন এমন অভিযোগ পান তিনি। এবিষয়ে তিনি অনুসন্ধান করছিলেন। তবে এদিন তিনি হাসপাতালের ফন্ট লাইনার করোনা আক্রান্ত নার্স ও তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ফিচার রির্পোট করার উদ্যেশ্যে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে যান। ওয়ার্ডটিতে মাত্র দুই জন নার্স ভর্তি ছিলেন। সাগিরা খাতুন নামের একজন নার্সের সঙ্গে তার মামা ছিলেন। যিনি আক্রান্ত নার্সের সেবা করছিলেন। ওয়ার্ডের মধ্যে কোন ইনচার্জকে দেখতে না পেয়ে তিনি এই নার্সের মামার সঙ্গে কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দূরে থেকেই এই নার্সের খোঁজখবর নেন।


তিনি আরও জানান, এরপর তিনি ইনচার্জ আছে কি না? জানতে চাইলে করোনা আক্রান্ত নার্স সাগিরা খাতুন ইশারাই পশ্চিমের রুমে যেতে বলেন। নার্সের মামাও বলেন তিনি ভেতরে আছেন। ভেতরের রুমের বারান্দায় দাঁড়াতেই কোন রকম মাস্ক কিংবা অন্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই পরিচয় জানতে চেয়ে গালাগালি করে বেরিয়ে যেতে বলেন। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও তিনি গালিগালাজ করেন। পরে তিনি ওয়ার্ডের বাইরে এসে কেন সাংবাদিক করোনা ওয়ার্ডে ঠুকবে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এসময় তার নাম জানতে চাইলে ও তিনি কেন মাস্ক পরেন নি জানতে চাইলে বাজে মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে সেখানে আরো একজন স্বাস্থকর্মী আসেন। তিনিও কোন মাস্ক না পরেই আসেন। এ সময় তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সাংবাদিক সর্ম্পকে বাজে মন্তব্য করেন।

এ সময় এই ওয়ার্ডের ইনচার্জ সহকারী পরিচয়ে ওই নারীর পুরুষ সহকারী বলেন, কার পারমিশন নিয়ে এখানে এসেছেন। মেডিকেলে আসতে হলে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। কর্তৃপক্ষ তো সাংবাদিক প্রবেশে লিখিত অনুমতির কথা বলেনি-এমন উত্তরে এই ব্যক্তি বলেন, কর্তৃপক্ষ জাহান্নামে যাক। এখানে আসতে হলে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও সাংবাদিক সর্ম্পকে বিভিন্ন বাজে মন্তব্যও করেন তিনি।

সংক্রমণ রোধে বাধ্যতামূলক মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিতসহ রাজশাহীতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী যখন কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ণ করছে সেসময় করোনার হটস্পট এলাকায় মাস্ক না পরে ঘুরছেন এই স্বাস্থ্যকর্র্মীরা। এতে বাড়ছে সংক্রমণ ঝুঁকি। এটিকে করোনার সংক্রমণ রোধে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের রামেক হাসপাতাল শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুল আলম বাদশা জানান, হাসপাতালে যারা চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত আছেন। তাদের মাস্ক, গ্লোভসসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী নিজের সুরক্ষার জন্যই ব্যবহার করতে হবে। আইসিইউতে যারা দায়িত্বে থাকেন। তাদের বাড়তি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। আর হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স এরা এসব বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারেই নিজের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে নিশ্চিত করেন। তবে কিছুক্ষেত্রে কিছু কর্মচারী এক্ষেতে উদাসীন থাকে। এতে তার আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাসহ তার দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু বিষয় হচ্ছে এরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেখলে মাস্ক পরে চলে গেলে আবার নাকের নিচে। এক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকেও কঠোর হতে হবে।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগিডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালে যারা চিকিৎসা সেবার সঙ্গেযুক্ত আছেন। তাদেরকে নিজের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতে ফেস মাস্ক, গ্লোভসসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউ এর ক্ষেত্রে বাড়তি সুরক্ষা নিশ্চিতও করা হচ্ছে। তবে হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মচারী ও লেবারদের কিছু এমন আছে। যারা মাস্ক পরতেও উদাসীন। যখন তারা হাসপাতালের কর্মকর্তাদের দেখেন তখন মাস্ক পরেন। তাদেরকে সর্তক করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, সাংবাদিকরা হাসপাতালে প্রবেশ করবে এতে বাঁধা নেয়। তবে তাদেরকে জানাতে হবে। তারা একটি লোক দিয়ে দিবেন। তার সঙ্গে ঘুরে সাংবাদিকরা তথ্য নিতে পারবে। আর এ ঘটনায় যারা এই সাংবাদিককে অপমান করেছে তাদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান জানান, প্রথম যখন রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যায়, তখন একটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা রোগিদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। সেখানে চিকিৎসার নামে সরকারি অর্থ অপচয় হয়েছে। এমন চিত্রগুলো সাংবাদিকরা সাহসীকতার সঙ্গে তুলে ধরছেন। জনগণের মোলিক অধিকার চিকিৎসা যেন রোগিরা সঠিকভাবে পায়, সে লক্ষ্য তারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। আর রামেক হাসপাতালে নিজেদের অনিয়মগুলো যেন সাংবাদিকরা তুলে ধরতে না পারে সেজন্য সাংবাদিকদের প্রবেশে একরকম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দিয়ে সাংবাদিকদের এমন অপমান, লাঞ্চনা কোনভাবেই কাম্য নয়। আর হাসপাতালের হটস্পট এলাকায় তারা মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করবে না এটা মেনে নেয়া যায় না। কারণ তার মাধ্যমে আরো অনেকেই মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরপি/ এসআই



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top